শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কিন্তু মামুষের যে বস্তুটি সামাজিক নয়, সে নিজে যে ইহাদের দুঃখে গোপনে অঙ্গ বিসর্জন না করিয়া কোন মতে থাকিতে পারে না। প্রায় মাস-দুই মৃত্যুঞ্জন্ধের খবর লই নাই। র্যাহারা পল্লীগ্রাম দেখেন নাই, কিংবা ওই রেলগাড়ির জানালায় মুখ বাড়াইয়া দেখিয়াছেন, তাহারা হয়ত সবিস্ময়ে বলিয়া উঠিলেন, এ কেমন কথা ! এ কি কখনও সম্ভব হইতে পারে যে, অত-ৰডু অসুখটা চোখে দেখিয়া আসিয়াও মাস-দুই আর তার কোন খবরই নাই ! তাহাদের অবগতির জন্য বলা আবশ্বক যে, এ শুধু সম্ভব নয়, এটা হইয়া থাকে। একজনের বিপদে পাড়াস্বদ্ধ ঝণক বাধিয়া উপুড় হইয়া পড়ে, এই যে একটা জনশ্রুতি আছে, জানি না তাহা সত্যযুগের পল্লীগ্রামে ছিল কি না, কিন্তু একালে ত কোথাও দেখিয়াছি বলির মনে করিতে পারি না। তবে তাহার মরার খবর যখন পাওয়া যায় নাই, তখন সে যে বঁাচিয়া আছে এ ঠিক । এমনি সময়ে হঠাৎ একদিন কানে গেল, মৃত্যুঞ্জয়ের সেই বাগানের অংশীদার খুড়া তোলপাড় করিয়া বেড়াইতেছেন যে, গেল গেল, গ্রামটা এবার রসাতলে গেল ! নালতের মিত্তির বলিয়া সমাজে আর তার মুখ বাহির করিবার জো রহিল না— অকালকুষ্মাওটা একটা সাপুড়ের মেয়ে নিকা করিয়া ঘরে আনিয়াছে। আর শুধু নিকা নয়, তাও না হয় চুলায় যাক, তাহার হাতে ভাত পৰ্য্যন্ত খাইতেছে। গ্রামে যদি ইহার শাসন না থাকে ত বনে গিয়া বাস করিলেই ত হয়। কোড়োল, হরিপুরের সমাজ এ-কথা শুনিলে যে—ইত্যাদি ইত্যাদি । তখন ছেলে-বুড়ো সকলের মুখেই ঐ এক কথা । আঁ্যা—এ হইল কি ? কলি কি সত্যই উন্টাইতে বসিল । খুড়া বলিয়া বেড়াইতে লাগিলেন, এ যে ঘটিবে তিনি অনেক আগেই জানিতেন। তিনি শুধু তামাস দেখিতেছিলেন ; কোথাকার জল কোথায় গিয়া মরে । নইলে পর নয়, প্রতিবেশী নয়, আপনার ভাইপো ! তিনি কি বাড়ি লইয়া যাইতে পারিতেন না ? তাহার কি ডাক্তার-বৈদ্য দেখাইবার ক্ষমতা ছিল না ? তবে কেন যে করেন নাই, এখন দেখুক সবাই। কিন্তু আর ত চুপ করিয়া থাকা যায় না। এ যে মিত্তিরবংশের নাম ডুবিয়া যায় ! গ্রামের যে মুখ পোড়ে। তখন আমরা গ্রামের লোক মিলিয়া যে কাজটা করিলাম, তাহা মনে করিলে আমি আজও লজ্জায় মরিয়া যাই । খুড়া চলিলেন নালতের মিত্তির-বংশের অভিভাবক হইয়া, আর আমরা দশ-বারোজন সঙ্গে চলিলাম, গ্রামের বদন দক্ষ না হয় ७ड्रेजछ । θψε
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৭০
অবয়ব