পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সহিত্য-সংগ্ৰহ আমরা অতিশয় অস্থির হইয়া উঠিতাম, শুধু অস্থির হইতেন না তিনি নিজে । একটা দিনের কথা মনে পড়ে। রাত্রি তথন নয়টাই হইবে কি দশটা হইবে, বাহিরে জল পড়িতেছে, আর আমি, মুভাষ ও তিনি শিয়ালদহের কাছে এক বড়লোকের বৈঠকখানায় বসিয়া আছি কিছু টাকার আশায় । আমি অসহিষ্ণু হইয়া বলিয়া উঠিলাম, গরজ কি এক আপনারই ? দেশের লোক সাহায্য করিতে যদি এতটাই বিমুখ হয়ে উঠে ত তবে থাকু। * মন্তব্য শুনিয়া বোধ হয় দেববন্ধু মনে মনে ক্ষুন্ন হইলেন। বলিলেন, এ ঠিক নয় শরৎবাৰু। দোষ আমাদেরই, আমরাই কাজ করতে জামিনে, আমরাই তাদের কাছে আমাদের কথাটা বুঝিয়ে বলতে পারিনে। বাঙ্গালী ভাবুকের জাত, বাঙ্গালী কৃপণ নয়। একদিন যখন সে বুঝবে, তার যথাসৰ্ব্বস্ব এনে আমাদের হাতে ঢেলে দেবে। এই-সকল কথা বলিতে গেলেই উত্তেজনায় তাহার চক্ষু জলিয়া উঠিত। এই বাজলাদেশ ও এই বাজলাদেশের মানুষকে তিনি কি ভালই বাসিতেন, কি বিশ্বাসই করিতেন । কিছুতেই যেন আর তাহদের ক্রটি খুজিয়া পাইতেন না। ’ এ-কথার আর উত্তয় কি, আমি চুপ করিয়া রছিলাম। কিন্তু আজ মনে হয়, বাস্তবিক এতখানি ভাল না বাসিলে এই অপরিসীম শক্তিই বা তিনি পাইতেন কোথায় ? লোক কাদিতেছে,—মহতের জন্ত দেশের লোক ইতিপূৰ্ব্বে আরও অনেকবার কাদিয়াছে, সে অামি চিনি । কিন্তু এ সে নয় ! একান্ত প্রিয় একান্ত আপনার জনের জন্ত মামুষের বুকের মধ্যে যেমন জালা করিতে থাকে, এ সেই । আর আমরা যাহারা তাহার আশে-পাশে ছিলাম, আমাদের ভয়ানক দুঃখ জানাইবার ভাষাও নাই, পরের কাছে জানাইতে ভালও লাগে না । আমাদের অনেকেরই মন হইতে দেশের কাজ করার ধারণাটা যেন ধীরে ধীরে অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছিল। আমরা করিতাম দেশবন্ধুর কাজ। আজ তিনি নাই, তাই থাকিয়া থাকিয়া এই কথাই মনে হইতেছে, কি হইবে অার কাজ করিয়া ? তাহার সব আদেশই কি আমাদের মন:পুত হইত ? হায় রে, রাগ করিবার অভিমান করিবার জায়গাও আমাদের ঘুচিয়া গেছে। যেখানে এবং যাহাকে বিশ্বাস করিতেন, সে বিশ্বাসের আর সীমা ছিল না। যেন একেবারে অন্ধ ! ইহার জন্ত আমাদের অনেক ক্ষতি হইয়া গিয়াছে, কিন্তু সহস্র প্রমাণ প্রয়োগেও এ বিশ্বাস টলাইবার জো ছিল না। সেদিন বরিশালের পথে স্টিমারে, ঘরের মধ্যে আলো নিভানো, আমি মনে করিয়াছিলাম, পাশের বিছানায় দেশবন্ধু ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, অনেক রাত্রিতে হঠাৎ ডাকিয়া বলিলেন, শরৎবাৰু, ঘুমাইয়াছেন ? 象>穆