পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লী-সমাজ জানিয়ে দিয়ে যাই। এখনই জোর করে রাধ কাটিয়ে দেব-তোমরা পার আটকাবার চেষ্টা করগে । বলিয়া রমেশ চলিয়া যায় দেখিয়া রমা ফিরিয়া ডাকিল। আহবান শুনিয়া রমেশ নিকটে আসিয়া দাড়াইতে রম কহিল, আমাৰ বাড়িতে দাড়িয়ে আমাকে যত অপমান কবলেন, আমি তাঁর একটাবও জবাব দিতে চাইনে, কিন্তু এ কাজ আপনি কিছুতেই করবেন না । রমেশ প্রশ্ন করিল, কেন ? রম কহিল, কারণ, এত অপমানেক পরেও আমার আপনার সঙ্গে বিবাদ করতে ইচ্ছে, করে না । তাহাৰ মুখ যে কিবপ অস্বাভাবিক পাণ্ডুর হইয়া গিয়াছিল এবং কথা কহি৬ে ঠোট কঁপিয়া গেল, তাহা সন্ধ্যাব অন্ধকারেও রমেশ লক্ষ্য করিতে পারিল । কিন্তু মনস্তত্ত্ব আলোচনাব অবকাশ এবং প্রবৃত্ত তাঙ্গার ছিল না ; তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল, কলহ-বিবাদেল অভিরুচি আমার ও নেই, একটু ভাবলেই ৩ টের পাবে। কিন্তু তোমাৰ সদ্ভবের মূল্যও আর আমার কাছে কিছুমাত্র নেই । যাই হোক, বাগবিতণ্ডার আবশ্বক নেই, আমি চললুম। মাসী উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ থাকায় এ-সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই। নীচে আসিয়া দেখিলেন, রমা দাসীকে সঙ্গে লইয়া বাহির হইতেছে। আশ্চৰ্য্য হইয়া প্রশ্ন কবিলেন, এই জল-কাদায় সন্ধ্যার পর্ব কোথায যস্যমা ? একবার বড়দার ওখানে যাব মাসী । দাসী কহিল, পথে আব এতটুকু কাদা পাববি জে নেহ দিদিম । ছোটবাৰু এমনি বাস্ত বঁধিয়ে দিয়েচেন যে, সি দুর পড়লে কুড়িয়ে নেওয়া যায়। ভগবান তাকে বঁচিয়ে রাখুন, গরীব দুঃখী সাপের হাত থেকে বেহাই পেয়ে বেঁচেচে । তখন রাত্রি বোধ করি এগারোটা । বেণীর চণ্ডীমণ্ডপ হইতে অনেকগুলি লোকের চাপ গলার আওয়াজ আসি৩েছিল । আকাশে মেঘ কতকটা কাটিয়া গিয়া ত্রয়োদশীর অস্বচ্ছ জ্যোৎস্না বারাণার উপব আসিয়। পড়িয়াছিল। সেহখানে খুটিতে ঠেস্ দিয়া একজন ভীষণাকৃতি প্রৌঢ় মুসলমান চোখ বুজিয়া বসিয়াছিল। তাহার সমস্ত মুখের উপর কাচ রক্ত জমাট বধিয়া গিয়াছে –পরনের বস্ত্র রক্তে বাঙা, কিন্তু সে চুপ করিয়া আছে। বেণী চাপা গলায় অনুনয় করিতেছেন, কথা শোন আকবর, থানায় চল। সাত সাত বছর যদি না তাকে দিতে পারি ৩ ঘোষাল-বংশের ছেলে নই আম । পিছনে চাহিয়া কহিল, রম, তুমি একবাব বল না, চুপ করে রইলে কেন ? কিন্তু বুমা তেমনি কাঠের মত নীরবে বসিয়া রহিল । আকবর আলি এবার চোখ খুলিয়া সোজা হইয়া বসিয়া বলিল, সাবাস! ই—মায়ের দুধ খেয়েছিল বটে ছোটবাবু লাঠি ধরলে বটে ! չԵՊ