পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দ্বিতীয় সম্ভার).djvu/৩১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিরাজ-বেী করিতে গিয়া হু হু করিয়া কাদিয়া উঠিল। বিক্ষিত ছোটবোঁ হেঁট মাথা তুলিতে না তুলিতে সে ক্রতপদে কোন দিকে অদৃগু হইয়া গেল। ছোটবোঁ জীবনে আজ প্রথম স্বামীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিয়া বাকিয়া দাড়াইল । অশ্র-ভারাক্রান্ত রক্তাভ চোখ দুইটি তুলিয়া বলিল, তুমি কি পাথর দিয়ে তৈরি ? দুঃখ কষ্ট্রে দিদি আত্মঘাতী হলেন, তবুও আমরা পর হয়ে থাকব ? তুমি থাকতে পার থাক গে, আমি আজ থেকে ৪-বাড়ির সব কাজ করব । পীতাম্বর চমকাইয়া উঠিল—সে কি কথা ? মোহিনী তুলসীর কাছে যতটুকু শুনিয়াছিল এবং নিজে মাহ অনুমান করিয়াছিল, ক্টাদিতে কঁাদিতে সমস্ত কহিল । পীতাম্বর সহজে বিশ্বাস করিবার লোক নয়। কহিল, তার দেহ ভেসে উঠবে ত ? ছোটবেী চোখ মুছিয়া বলিল, না উঠতেও পারে! স্রোতে ভেসে গেছেন, সতীলক্ষ্মীর দেহ মা-গঙ্গা হয়ত বুকে তুলে নিয়েচেন । তা ছাড়া কে বা সন্ধান করচে, কে বা খুজে বেড়িয়েছে ? পীতাম্বর প্রথমটা বিশ্বাস করিল না, শেষটা করিল ; বলিল, আচ্ছা আমি খোজ করাচ্চি। একটু ভাবিয়া বলিল, বৌঠান মামার বাড়ি চলে যায়নি ত? মোহিনী মাথা নাড়িয়া বলিল, কখখন না। দিদি বড় অভিমানী, তিনি কোথাও যাননি, নদীতেই প্রাণ দিয়েছেন । আচ্ছ, তাও দেখছি, বলিয়া পীতাম্বর শুষ্কমুখে বাহিরে চলিয়া গেল। বৌঠানের জন্য আজ হঠাৎ তাহার প্রাণটা খারাপ হইয়া গেল । লোকজন নিযুক্ত করিয়া, একজন প্রজাকে বিরাজের মামার বাড়ি পঠাইয়া, জীবনে আজ সে প্রথম পুণ্যের কাজ করিল। স্ত্রীকে ডাকিয়া বলিল, যন্ধুকে দিয়ে উঠানের বেড়াটা ভাঙিয়ে দাও, আর যা পার কর । দাদার মুখের পীনে চাইতে পারা যায় না ; বলিয়া গুড় মুখে দিয়া একটু জল খাইয়া দপ্তর বগলে করিয়৷ কাজে চলিয়া গেল। চার-পাচ দিন কামাই হওয়ায় তাহার অনেক ক্ষতি হইয়াছিল। কাজ করিতে করিতে ছোটবোঁ ক্রমাগত চোখ মুছিয়া ভাবিতেছিল, ইনি যে মুখের পানে চাইতে পারেন নাই, সে মুখ না জানি কি হইয়। গিয়াছে ! নীলাম্বর চণ্ডীমণ্ডপের মাঝখানে চোখ বুজিয়া স্তব্ধ হইয়া বসিয়াছিল। স্বমুখে দেয়ালে টাঙান রাধাকৃষ্ণের যুগলমূৰ্ত্তির পট । এই পটখানি নাকি জাগ্রত। যখন রেলগাড়ি হয় নাই, তখন তাঁহাদের পিতামহ পায়ে হঁটিয়া এখানি বৃন্দাবন হইতে আনিয়াছিলেন । তিনি পরম বৈধব ছিলেন, তাহার সহিত পটখানি মামুষের গলায় কথা কহিত, এ ইতিহাস নীলাম্বর তাহার জননীর কাছে বহুবার শুনিয়াছিল। ঠাকুর-দেৰত জিনিসটা তাহার কাছে ঝান্স ব্যাপার ছিল না। তেমন করিয়া ভাকার ۹ • با