পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ হত। তাঁর ভয়ঙ্কর মূৰ্ত্তি কল্পনায় আঁকতে পারে এমন কেউ নেই? এ সম্ভাবন ভাবাও যায় না । কমল বলিল, যায় এবং যাবেও একদিন। তার কারণ মাহুষের ইতিহাসের শেষ অধ্যায় লেখা শেষ হয়ে যায়নি। একদিনের একটা অনুষ্ঠানের জোরে তার অব্যাহতির পথ যদি সারা জীবনের মত অবরুদ্ধ হয়ে আসে, তাকে শ্রেয়ের ব্যবস্থা বলে মেনে নেওয়া চলে না। পৃথিবীতে সকল ভুল-চুকের সংশোধনের বিধি আছে, কেউ তাকে মন্দ বলে না, কিন্তু যেখানে ভ্রাস্তির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, আর তার নিরাকরণের প্রয়োজনও তেমনিই অধিক, আর সেইখানেই লোকে সমস্ত উপায় যদি স্বেচ্ছায় বন্ধ করে থাকে তাকে জাল বলে মানি কি করে বলুন ? এই মেয়েটির নানাবিধ দুর্দশায় হরেন্দ্রর মনের মধ্যে গভীর সমবেদন ছিল ; বিরুদ্ধ-আলোচনায় সহজে যোগ দিত না এবং বিপক্ষ দল যখন নানাবিধ সাক্ষ্যপ্রমাণের বলে তাহীকে হীন প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিত, সে প্রতিবাদ করিত। তাহারা কমলের প্রকাশু আচরণ ও তেমনি নিলজ উক্তিগুলার নজির দেখাইয় যখন ধিক্কার দিতে থাকিত, হরেন তর্ক-যুদ্ধে হারিয়াও প্রাণপণে বুঝাইবার চেষ্টা করিত যে, কমলের জীবনে কিছুতেই ইহা সত্য নয়। কোথায় একটা নিগুঢ় রহস্য আছে একদিন তাহ ব্যক্ত হইবেই হইবে। তাহার বিরূপ করিয়া কহিত, দয়া করে সেইটে তিনি ব্যক্ত করলে প্রবাসী বাঙালী-সমাজে আমরা যে বাচি। অক্ষয় উপস্থিত থাকিলে ক্রোধে ক্ষিপ্ত হইয়া বলিত, অপমারা সবাই সমান। আমার মত আপনাদের কারও বিশ্বাসের জোর নেই। আপনারা নিতেও পারেন না, ফেলতেও চান না। আধুনিক কালের কতকগুলো বিলিতি চোথা চোখ বুলি যেন আপনাদের ভূতগ্রস্ত করে রেখেচে । অবিনাশ বলিতেন, বুলিগুলো কমলের কাছ থেকে নতুন শোনা গেল তা নয় হে অক্ষয়, পূৰ্ব্বে থেকেই শোনা আছে। আজকালের খান-দুই-তিন ইংরাজি তর্জমার বই পড়লে জানা যায়। বুলির জেলস নয়। অক্ষয় কঠিন হইয়া প্রশ্ন করিত, তবে কিসের জৌলস ? কমলের রূপের ? অবিনাশবাবু, হরেন অবিবাহিত ছোকরা—ওকে মাপ করা যায়, কিন্তু বুড়োবয়সে আপনাদের চোখেও যে ঘোর লাগিয়েচে এই আশ্চৰ্য্য। এই বলিয়। সে কটাক্ষে আপ্তবাবুর প্রতিও একবার চাহিয়া লইয়া বলিত, কিন্তু এ আলেয়ার আলো অবিনাশবাবু, পচা পাকের মধ্যে এর জন্ম। পাকের মধ্যেই একদিন অনেককে টেনে নামাবে তা স্পষ্ট দেখতে পাই। শুধু অক্ষয়কে এ-সব ভোলাতে পারে না—সে আসল নকল চেনে । Ꮌ☾b"