পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ করিলেন, সেদিন ভৈরবীকে যে কাছারিতে তলব করেছিলাম, কেউ তাকে খবর দিয়েছিলে ? এককড়ি কহিল, আমি নিজে দিয়েছিলাম। তিনি এসেছিলেন । আজ্ঞে না । না কেন ? এককড়ি অধোমুখে নীরবে দাড়াইয়া রহিল। জীবানন্দ উৎসুক হইয়া প্রশ্ন করিলেন, তিনি কখন আসবেন জানিয়েছিলেন ? এককড়ি তেমনি অধোমুখে থাকিয়াই অন্মুট-কণ্ঠে কহিল, এত লোকের সামনে আমি সে-কথা হুজুরে পেশ করতে পারব না। জীবানন্দ হাতের শূন্য গ্লাসটা নামাইয়া রাখিয়া হঠাৎ কঠিন হইয়া বলিয়া উঠিলেন, এককড়ি, তোমার গোমস্তাগিরি কায়দাটা একটু ছাড় । তিনি আসবেন—না, না ? व्षों কেন ? এবার প্রত্যুত্তরে যদিচ এককড়ি তাহার জমিদারি কায়াটা সম্পূর্ণ ছাড়িল না, কিন্তু সবাই শুনিতে পায় এমনি সুস্পষ্ট করিয়াই কহিল, তিনি আসতে পারবেন না, এ-কথা যত লোক দাড়িয়েছিল শুনেচে । বলেছিলেন, তোমার হুজুরকে ব’লো এককড়ি, তার বিচার করবার মত বিদ্যে-বুদ্ধি থাকে ত নিজের প্রজাদের করুন গে। আমার বিচার করবার জন্যে আদালত খোলা আছে । সহসা মনে হইল জমিদারের এতক্ষণের এত রহস্ত, এত সরল ঔদাস্ত, হাস্তোজ্জল মুখ ও তরল কণ্ঠস্বর চক্ষের পলকে নিবিয়া যেন অন্ধকার হইয়া গেল। ক্ষণকাল পরে শুধু আস্তে আস্তে কহিলেন, ছ। আচ্ছা তুমি যাও। প্রফুল্ল, সেই যে কি একটা চিনির কোম্পানি হাজার বিঘে জমি চেয়েছিল, তাদের কোন জবাব দিয়েছিলে ? আজ্ঞে না । তা হলে লিখে দাও যে জমি তারা পাবে । দেরি ক’রো না । না, দিচ্চি লিখে, এই বলিয়। সে এককড়িকে সঙ্গে লইয়া প্রস্থান করিল। আবার কিছুক্ষণের জন্য সমস্ত গৃহটা নিস্তব্ধ হইয়া রহিল। শিরোমণি উঠিয়া দাড়াইয়া আশীৰ্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, আমরা আজ তা হলে আলি ? আসুন । মায়মহাশয় হেঁট হইয়া প্রণাম করিয়া কহিলেন, অনুমতি হয় ত আর একদিন চরণ দর্শন করতে আসব।