পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সে বিচ্ছিন্ন করিয়া রাখিবেই, এই ছিল তাহার পণ । কিন্তু পরদিন সকাল ন হইতেই যখন শ্বশুরের জরুরি তার আসিয়া পড়িল এবং সন্ধ্যার মেলে শাশুড়ীর চিঠিও আসিল, পত্র পাওয়া মাত্র জামাই না আসিয়া পৌছিলে তাহার বৃদ্ধ শ্বশুরকে এ-যাত্রা কেহই রক্ষা করিতে পরিবে না জেল তাহাকে খাটিতে হইবে, তখন হৈম কঁদিতে লাগিল, এবং আর একবার তোরঙ্গ ও বিছানাপত্র বাধিবার হুকুম দিয়া নিৰ্ম্মলকে তাহার কাজের বন্দোবস্ত করিতে বাট হইতে বাহির হইতে হইল । দিন-দুই পরে হৈমকে সঙ্গে করিয়া নিৰ্ম্মল চণ্ডীগড়ে আসিয়। উপস্থিত হইল । দেখিল কটা ভয়ের মধ্যে সকলেরই দিন কাটিতেছে। কে যে কখন আগুন ধরাইয়া দিবে তাহার ঠিক নাই । চারিদিকে লোক নিযুক্ত হইয়াছে, কর্তা শুকাইয়া যেন অৰ্দ্ধেক হইয়া গেছেন, কোথা ও বাহির হন না এতবড় প্রতাপান্বিত ব্যক্তির নিজের গ্রামের মধ্যেই এতবড় দুর্গত দেখিয়া নিৰ্ম্মল বিস্মিত হইল। এখান হইতে বেশী দিন সে যায় নাই, কিন্তু কি পরিবর্তন ! খবর যাহা পাইল তাহ অত্যন্ত উল্টাপাল্টা রকমের, বিশেষ কিছু বুঝা গেল না ; কেবল একটা সংবাদে সকলেরই মিল হইল যে, জমিদার জীবানন্দ চৌধুরীর মাথা খারাপ হইয়া গেছে। সে মদ ছাড়িয়াছে, প্রজাদের দিয়া নিজের বিরুদ্ধে নালিশ করাইয়া দিয়াছে, যে টাকায় পোড়া বাড়ি মেরামত করা উচিত ছিল, তাহা দিয়া মাঠের সাকো তৈরি করাইতেছে—এমনি কত কি গল্প, কিন্তু হঠাৎ কিসের জন্য সে এরূপ হইল, তাহ কেহই জানে না। এই লোকটিকে নিৰ্ম্মল অতিশয় ঘূণ করত, ইহারই কাছে দরবার করিতে যাইতে হইবে মনে করা সে অতিশয় সঙ্কুচিত হইল। অথচ ব্যাপার যাহ। দাড়াইয়াছে তাহাতে আর যে কি পথ আছে তাহাও চোখে পড়িল না। ভূমিজ প্রজারা অত্যন্ত বিরুদ্ধে। একে ৩ তাহদের সর্বনাশ হইয়াছে, এবং তাহা সম্পাদন করিতে কোন চেষ্টারুই ফ্রটি হয় নহি, তাহাতে তাহদের একমাত্র শুভাকাঙ্খিণী ভৈরবী মাতার প্রতি যে অত্যাচার হইয়াছে, তাহাতে ক্রোধের তাহদের সীমা নাই। তাহারা কোন কথা শুনিবে না। এদিকে মাদ্রাজী সাহেবের বিস্তর ক্ষতি, র্তাহার কল-কঞ্জ আসয় পড়িয়াছে, সে ক্ষতিপূরণ করা একপ্রকার অসাধ্য ব্যাপার। জমির দখল প্তাহার চাহ-ই । বিশেষতঃ নিজে অনুপস্থিত থাকিয় যে এটনির দ্বারা তিনি কাজ চালাইতেছেন, তিনি যেমন রুক্ষ, তেমনি অভদ্র, তাহার কাছে কোন স্থবিধারই আশা নাই। একমাত্র ভরসা নিজেদের মধ্যে এক হওয়া। যেহেতু, আর যাহাই হোক, পিনাল কোডের সেই দুরন্ত ধারাগুলো তাহাতে বাচিবার সম্ভাবনা । নিজেদের মধ্যে কবুল জবাব দিলে আর রাস্তা নাই, অথচ সেই পাগল লোকটা শাসাইয়া রাখিয়াছে হাকিমের কাছে সে কোন কথাই লুকাইবে না। এই չԵ*