পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ হাতে। এই বলিয়া সে সজোরে নিজের বুক ঠুকিয়া বলিল, নইলে কে ও জানেন ? শুনবেন 6র মায়ের— ইন্সপেক্টর থামাইয়া দিয়া কহিলেন, থামো ঠাকুর, থামো। রাগের মাথায় পুলিশের কাছে সব কথা বলে ফেলতে নেই -- তাতে বিপদে পড়তে হয় । ষোড়শীর প্রতি চাহিয়া কহিলেন, তুমি যেতে চাও ত আমরা তোমাকে নিরাপদে ঘরে পৌঁছে দিতে পারি। চল, আর দেরি ক’রো না । এতক্ষণ পৰ্য্যস্ত ষোড়শী অধোমুখে নিঃশব্দে দাড়াইয়াছিল, এইবার ঘাড় নাড়িয়া জানাইল, না । পুলিশের ছোটবাবু মুখ টিপিয়া হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ষাবার বিলম্ব আছে বুঝি ? ষোড়শী মুখ তুলিয়া চাহিল, কিন্তু জবাব দিল ইন্সপেক্টরবাবুকে । কহিল, আপনার যান, আমার যেতে দেরি আছে। দেরি আছে ? হারামজাদী, তোকে যদি না খুন করি ত আমি মনোহর চক্কোত্তির ছেলে নই! এই বলিয়া তারাদাস উন্মাদের ন্যায় লাফাইয়া উঠিয়া বোধ হয় তাহাকে যথার্থই কঠিন আঘাত করিত, কিন্তু ইন্সপেক্টরবাবু ধরিয়া ফেলিয়া ধমক দিয়া কহিলেন, ফের যদি বাড়াবাড়ি কর ত তোমাকে থানায় ধরে নিয়ে যাব । চল, ভালমানুষের মত ঘরে চল । এই বলিয়া তিনি লোকটাকে এক প্রকার টানিয়া লইয়াই গেলেন, কিন্তু তারাদাস র্তাহার হিত কথায় কর্ণপাতও করিল না। যতদূর শোনা গেল, সে সুউচ্চ কণ্ঠে ষোড়শীর মাতার সম্বন্ধে যা-তা বলিতে বলিতে এবং তাহাকে অচিরে হত্যা করিবার কঠিনতম শপথ পুনঃ পুনঃ ঘোষণা করিতে করিতে গেল । পুলিশের সম্পৰ্কীয় সকলেই যথার্থ বিদায় গ্রহণ করিল, কিংবা কোথাও কেহ লুকাইয়া রহিয়া গেল, এ বিষয়ে নিংশয় হইতে ধূৰ্ত্ত এককড়ি পা টিপিয়া নিঃশবে বাহির হইয়া গেলে, জীবানন্দ ইঙ্গিত করিয়া ষোড়শীকে আর একটু নিকটে আহান করিয়া অতিশয় ক্ষীণকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, তুমি এদের সঙ্গে গেলে না কেন ? ষোড়শী কহিল, এদের সঙ্গে ত আমি আসি নি । জীবানন্দ কয়েক মুহূৰ্ত্ত নীরবে থাকিয়া বলিল, তোমার বিষয়ের ছাড় লিখে দিতে দু-চার দিন দেরি হবে, কিন্তু টাকাটা কি তুমি আজই নিয়ে যাবে ? ষোড়শী কহিল, তাই দিন । জীবানন্দ শয্যার এক নিভৃত প্রদেশে হাত দিয়া একতাড়া নোট টানিয়া বাহির করিল। সেইগুলো গণনা করিতে করিতে ষোড়শীর মুখের প্রতি বার বার চাহিয়া ॐ }