পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নমস্কার পর্য্যন্তও জানানো হইল না । তাহার পরে নিদিষ্ট পথ ধরিয়া ধীরে ধীরে অগ্রসর হইলেম । ఫెరి বসুসাহেব যখন শ্বশুরবাটীতে আসিয়া প্রবেশ করিলেন, তখন র্তাহারই জন্য বাড়িময় একটা উৎকণ্ঠার সাড়া পড়িয়া গিয়াছে। ঘরে এবং বাইরে সেখানে যত আস্ত এবং ভাঙা লণ্ঠন ছিল সংগ্ৰহ হইয়াছে, এবং এই দুৰ্য্যোগের রাত্রে এগুলিকে কাৰ্য্যোপযোগী করিয়া তুলিবার প্রচেষ্টায় বাড়িশুদ্ধ সকলে গলদঘৰ্ম্ম হইয়া উঠিয়াছে। চাকর-বাকর ও আত্মীয়-অনুগত লইয়। একটা অভিযানের দল তৈরি হইয়াছে এবং রায়মহাশয় নিজে সমস্ত তত্ত্বাবধান করিতেছেন ; কাহারা কোনদিকে যাইবে, কোন পথ, কোন মাঠ, কোন বন জঙ্গল অনুসন্ধান করিবে, বারংবার উপদেশ দিতেছেন। তাতার আচরণে ও কণ্ঠস্বরে কেবল উদ্বেগ নয়, আতঙ্ক প্রকাশ পাইয়াছে । এখনও প্রকাশ করিয়া কিছু বলেন নাই সত্য, কিন্তু যে ভয়ট তাহার মনের মধ্যে উকি মারিতেছে তাহ অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। তিনি জানিতেন ষোড়শার কয়েকজন একান্ত অনুগত ভূমিজ ও বাগদী প্রজা আছে । তাহার। এমন উদ্ধত তেমনি নিষ্ঠুর, ডাকাতি করে বলিয়া পুলিশের খাতায় নাম-ধাম পৰ্য্যস্ত লেখা আছে—ইহারা এই অন্ধকার রাত্রে কোথাও একাকী পাইয়া যদি তাহাদের ভৈরবা-মায়ের প্রতি অবিচার স্মরণ করিয়া সহসা প্রতিহিংসায় উত্তেজিত হুহয় উঠে ত, সেখানেও বিচারের আশা করা বৃথা । হৈম একপাশে চুপ করিয়া দাড়াইয়া সমস্তই দেখিতেছিল, পিতার আশঙ্কাও তাহার দৃষ্টি এড়ায় নাই, কিন্তু তখন পর্য্যন্ত সে ভিতরের আসল কথাটা জানিত না । এইটাই আত্মপ্রকাশ করিল তfহার জননীর কথায় । তিনি হঠাং বাহিরে আসিয়া স্বামীকে কঠোর অনুযোগ করিয়া বলিয়া উঠিলেন, সে জামাই মানুষ, তাকে কেন তোমাদের ঝগড়ার মধ্যস্থ মান ? যার পিছনে ডাকাতের দল রয়েচে তাকে করবে তোমরা জব্দ ? যেখানে পাও আমার নিৰ্ম্মলকে খুঁজে এনে দাও, নইলে যেখানে দু’চক্ষু যায় এই অন্ধকারে আমি বেরিয়ে যাবে। এই বলিয়। তিনি র্কাদ -র্কাদ হইয়। অন্তঃপুরে চলিয়া গেলেন, এবং কিছুক্ষণের জন্য কন্যা ও পিতা উভয়েই নিৰ্ব্বাক বিবর্ণযুখে স্তব্ধ হইয়া রছিলেন । জনাৰ্দ্দন রায় আত্মসংবরণ করিয়া সাত্ত্বনা ও সাহসস্থচক কি একটা কথা হৈমকে বলিঙে যাইতেছিলেন, ঠিক এমনি সময়ে জামাতা প্রাঙ্গণে আসিয়া দাড়াইলেন । •£