শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ করিয়া নষ্ট করিয়া দিল যে, মনে হইতে লাগিল, যেন দশ-বিশ দিন তণ্ডুল-কণাটিও মুখে যায় নাই । এরূপ কদৰ্য্য স্থানে বাস করা অার একদণ্ড উচিত নয় মনে করিয়া স্থান ত্যাগের কল্পনা করিতেছি, দেখি অদূরে একটা আমবাগানের ভিতর হইতে ধুম দেখা দিয়াছে। আমার ন্যায়শাস্ত্র জানা ছিল। ধুম দেখিয়া অগ্নি নিশ্চয়ই অনুমান করিলাম ; বরঞ্চ অগ্নিরও হেতু অল্পমান করিতে আমার বিলম্ব হইল না। সুতরাং সোজা সেইদিকে অগ্রসর হইয়া গেলাম। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, জলটা এখানকার বড় বদ। বাঃ-এই ত চাই ! এ যে খাটি সন্ন্যাসীর আশ্রম। মস্ত ধুনির উপর লোটায় করিয়৷ চায়ের জল চড়িয়াছে। ‘বাবা অৰ্দ্ধমুদ্রিত চক্ষে সম্মুখে বসিয়া আছেন ; র্তাহার আশে পাশে গাজার উপকরণ । একজন বাচ্চা-সন্ন্যাসী একটা ছাগী দোহন করিতেছে—চা-সেবায় লাগিবে। গোটা দুই উট, গোটা দুই টাটু ঘোড় এবং সবংস গাভী কাছাকাছি গাছের ডালে বাধা রহিয়াছে। পাশেই একটা ছোট তাবু। উকি মারিয়া দেখি, ভিতরে আমার বয়সী এক চেলা দুই পায়ে পাথরের বাটি ধরিয়া মস্ত একটা নিমদণ্ড দিয়া ভাঙ ভৈয়ারী করিতেছে। দেখিয়া আমি ভক্তিতে আপ্লুত হইয়া গেলাম ; এবং চক্ষের পলকে সাধু বাবাজীর পদতলে একেবারে লুটাইয়া পড়িলাম। পদধূলি মস্তকে ধারণ করিয়া করজোড়ে মনে মনে বলিলাম, ভগবান, তোমার কি অসীম করুণা ! কি স্থানেই আমাকে আনিয়া দিলে। চুলোয় যাকগে পিয়ারী,— এই মুক্তিমাগের সিংহদ্বার ছাড়িয়া তিলাৰ্দ্ধ যদি অন্যত্র যাই, আমার যেন অনস্ত নরকেও আর স্থান না হয় ! সাধুজী বলিলেন, কেও বেটা ? আমি সবিনয়ে নিবেদন করিলাম, আমি গৃহত্যাগী, মুক্তি-পথাম্বেষী হতভাগ্য শিশু ; আমাকে দয়া করিয়া তোমার চরণ-সেবার অধিকার দাও । সাধুজী মৃদু হাস্ত করিয়া বার-দুই মাথা নাড়িয়া হিন্দী করিয়া সংক্ষেপে বলিলেন, বেট ঘরে ফিরিয়া যাও—এ পথ অতি দুর্গম । আমি করুণ-কণ্ঠে তৎক্ষণাৎ প্রত্যুত্তর করিলাম, বাবা, মহাভারতে লেখা আছে, মহাপাপিষ্ঠ জগাই-মাধাই বশিষ্ঠ মুনির পা ধরিয়া স্বর্গে গিয়াছিলেন ; আর আপনার পা ধরিয়া আমি কি মুক্তিও পাইব না ? নিশ্চয়ই পাইব । সাধুজী খুশী হইয়া বলিলেন, বাত তের সাচ্চ হায়। আচ্ছ বেটা রামজীক খুনী। যিনি দুগ্ধ দোহন করিতেছিলেন, তিনি আসিয়া চা তৈরি করিয়া বাবা'কে দিলেন। র্তাহার সেবা হইয়া গেলে আমরা প্রসাদ পাইলাম। ভাঙ তৈয়ারী হইতেছিল সন্ধ্যার জন্য । তখনও বেল ছিল, স্বতরাং অন্য > co
