শান্তিনিকেতন
তিমির দিগ ভরি ঘোর যামিনী,
অথির বিজুরিক পাঁতিয়া।
বিদ্যাপতি কহে, কৈসে গোঙায়বি
হরি বিনে দিনরাতিয়া।
প্রহরের পর প্রহর ধরে এই বার্তাই সে জানাচ্ছে, ‘ওরে, তুই-যে বিরহিনী— তুই বেঁচে আছিস কী করে! তোর দিনরাত্রি কেমন করে কাটছে!’
সেই চিরদিনরাত্রির হরিকেই চাই, নইলে দিনরাত্রি অনাথ। সমস্ত আকাশকে কাঁদিয়ে তুলে এই কথাটা আজ আর নিঃশেষ হতে চাচ্ছে না।
আমরা যে তাঁরই বিরহে এমন করে কাটাচ্ছি, এ খবরটা আমাদের নিতান্তই জানা চাই। কেননা, বিরহ মিলনেরই অঙ্গ। ধোঁয়া যেমন আগুন জ্বলার আরম্ভ, বিরহও তেমনি মিলনের আরম্ভ-উচ্ছ্বাস।
খবর আমাদের দেয় কে? ওই-যে তোমার বিজ্ঞান যাদের মনে করছে তারা প্রকৃতির কারাগারের কয়েদী, যারা পায়ে শিকল দিয়ে একজনের সঙ্গে আর-একজন বাঁধা থেকে দিনরাত্রি কেবল বোবার মতো কাজ করে যাচ্ছে— তারাই। যেই তাদের শিকলের শব্দ আমাদের হৃদয়ের ভিতরে গিয়ে প্রবেশ করে অমনি দেখতে পাই, এ-যে বিরহের বেদনাগান, এ-যে মিলনের আহ্বানসংগীত। যে-সব খবরকে কোনো ভাষা দিয়ে বলা যায় না সে-সব খবরকে এরাই তো চুপিচুপি বলে যায়, এবং মানুষ কবি সেই-সব খবরকেই গানের মধ্যে কতকটা কথায় কতকটা সুরে বেঁধে গাইতে থাকে—
ভরা বাদর, মাহ ভাদর,
শূন্য মন্দির মোর!
১০০