শান্তিনিকেতন
লক্ষ্য করো। মন শান্ত ক’রে, হৃদয় শুদ্ধ ক’রে, এই দিকে দেখতে দেখতেই দেখবে এই সমস্ত যাওয়া সার্থক হচ্ছে এমন একটি থাকা স্থির হয়ে আছে। দেখতে পাবে—
বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকঃ।
সেই এক যিনি তিনি অন্তরীক্ষে বৃক্ষের মতো স্তব্ধ হয়ে আছেন।
জীবন যতই এগচ্ছে ততই দেখতে পাচ্ছি, সেখানেও সেই এক যিনি তিনি সমস্ত যাওয়া-আসার মধ্যে স্তব্ধ হয়ে আছেন। নিমেষে নিমেষে যা সরে গেছে, ঝরে গেছে, যা দিতে হয়েছে, তার হিসাব রাখতে কে পারে— তা অনেক, তা অসংখ্য—কিন্তু এই সমস্ত গিয়ে, সমস্ত দিয়ে, যাঁকে পাচ্ছি তিনি এক। ‘গেছে গেছে’ এ কথাটা যতই কেঁদে বলি-না কেন, ‘তিনি আছেন, তিনি আছেন’ এই কথাটাই সকল কান্না ছাপিয়ে জেগে উঠছে। সব গেছে এই শোক যেখানে জাগছে সেখানে ভালো করে তাকাও, তিনি আছেন এই অচল আনন্দ সেখানে বিরাজমান।
যেখানে যা-কিছু সমস্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে সেই গভীর নিঃশেষতার মধ্যে আজ বর্ষশেষের দিনে মুখ তুলে তাকাও, দেখো: বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকঃ। চিত্তকে নিস্তব্ধ করো—বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত গতি নিস্তব্ধ হয়ে যাবে, আকাশের চন্দ্রতারা স্থির হয়ে দাঁড়াবে, অণুপরমাণুর অবিরাম নৃত্য একেবারে থেমে যাবে। দেখবে বিশ্বজোড়া ক্ষয়মৃত্যু এক জায়গায় সমাপ্ত হয়ে গেছে। কলশব্দ নেই, চাঞ্চল্য নেই, সেখানে জন্মমরণ এই নিঃশব্দ সংগীতে বিলীন হয়ে রয়েছে: বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকঃ।
আজ আমি আমার জীবনের দেওয়া এবং পাওয়ার মাঝখানের আসনটিতে বসে তাঁর উপাসনা করতে এসেছি। এই জায়গাটিতে
২৪২