শান্তিনিকেতন সত্যের তো প্রকাশ এমনি করেই, এই চিরচঞ্চলতায় । নৃত্যের কোনো-একটি ভঙ্গিও স্থির হয়ে থাকে না, কেবলই তা নানাখানা হয়ে উঠছে। তবু ষে দেখছে সে আনন্দিত হয়ে বলছে, ‘আমি নাচ দেখছি।’ নাচের সমস্ত অনিত্য ভঙ্গিই তালে মানে বাধা একটি নিরবচ্ছিন্ন সত্যকে প্রকাশ করছে। আমরা নাচের নানা ভঙ্গিকেই মুখ্য করে দেখছি নে ; আমরা দেখছি তার সেই সত্যটিকে, তাই খুশি হয়ে উঠছি। যে ভাঙা গাড়িটা রাস্তার ধারে অচল হয়ে পড়ে আছে সে আপনার জড়ত্বের গুণেই পড়ে থাকে ; কিন্তু যে গাড়ি চলছে তার সারথি, তার বাহন, তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, তার চলবার পথ, সমস্তেরই পরস্পরের মধ্যে একটি নিয়তপ্রবৃত্ত সামঞ্জস্য থাকা চাই তবেই সে চলে। অর্থাৎ, তার দেশকালগত সমস্ত অংশপ্রত্যংশকে অধিকার ক’রে, তাদের যুক্ত ক’রে, তাদের অতিক্রম করে যদি সত্য না থাকে তবে সে গাড়ি চলে না । যে ব্যক্তি বিশ্বসংসারে এই কেবলই বদল হওয়ার দিকেই নজর রেখেছে সেই মানুষই হয় বলছে সমস্তই স্বপ্ন, নয় বলছে সমস্তই বিনাশের প্রতিরূপ— অতি ভীষণ । সে হয় বিশ্বকে ত্যাগ করবার জন্যে ব্যগ্র হয়েছে, নয় ভীষণ বিশ্বের দেবতাকে দারুণ উপচারে খুশি করবার আয়োজন করছে । কিন্তু, যে লোক সমস্ত তরঙ্গের ভিতরকার ধারাটি, সমস্ত ভঙ্গির ভিতরকার নাচটি, সমস্ত স্বরের ভিতরকার সংগীতটি দেখতে-শুনতে পাচ্ছে সেই তো আনন্দের সঙ্গে বলে উঠছে ‘সত্যম্ । সেই জানে, বৃহৎ ব্যাবসা যখন চলে তখনই বুঝি সেটা সত্য, মিথ্যা হলেই সে দেউলে হয়ে অচল হয়। মহাজনের মূলধনের যদি সত্য পরিচয় পেতে হয় তবে যখন তা খাটে তখনই তা সম্ভব । 8وثنيا
পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৫
অবয়ব