শান্তিনিকেতন
মধ্যে তাদের চেষ্টা ঘুরে বেড়াচ্ছে; মুহূর্তকালের জন্যেও তারা এমন কথা মনে করতে পারে না যে, যাকে দেখা যায় না তাকেও খুঁজতে হবে, যাকে পাওয়া যায় না তাকেও লাভ করতে হবে। তাদের ইন্দ্রিয় এই বাইরে এসে থেমে গিয়েছে; তাকে অতিক্রম করতে পারছে না ব’লে তাদের মনে কিছুমাত্র বেদনা নেই।
কিন্তু, এই একটি অত্যন্ত আশ্চর্য ব্যাপার, মানুষ প্রকাশ্যের চেয়ে গোপনকে কিছুমাত্র কম করে চায় না— এমন কি, বেশি করেই চায়। তার সমস্ত ইন্দ্রিয়ের বিরুদ্ধ সাক্ষ্য-সত্ত্বেও মানুষ বলেছে, ‘দেখতে পাচ্ছি নে কিন্তু আরও আছে, শোনা যাচ্ছে না কিন্তু আরও আছে।’
জগতে অনেক গুপ্ত সামগ্রী আছে যার আচ্ছাদন তুলে ফেললেই তা প্রত্যক্ষগম্য হয়ে ওঠে, এ কিন্তু সেরকম নয়— এ আচ্ছন্ন ব’লে গুপ্ত নয়, এ গভীর ব’লেই গুপ্ত। সুতরাং, একে যখন আমরা জানতে পারি তখনও এ গভীর থাকে।
গোরু উপরের থেকে ঘাস ছিঁড়ে খায়, শূকর দাঁত দিয়ে মাটি চিরে সেই ঘাসের মুথা উপড়ে খেয়ে থাকে। কিন্তু, এখানে উপরের ঘাসের সঙ্গে নিচেকার মুথার প্রকৃতিগত কোনো প্রভেদ নেই, দুটিই স্পর্শগম্য এবং দুটিতেই সমান রকমেই পেট ভরে। কিন্তু, মানুষ গোপনের মধ্যে যা খুঁজে বের করে প্রকাশ্যের সঙ্গে তার যোগ আছে, সাদৃশ্য নেই। তা খনির ভিতরকার খনিজের মতো তুলে এনে ভাণ্ডার বোঝাই করবার জিনিস নয়। অথচ মানুষ তাকে রত্নের চেয়ে বেশি মূল্যবান রত্ন বলেই জানে।
তার মানে আর-কিছুই নয়, মানুষের একটি অন্তরতর ইন্দ্রিয় আছে— তার ক্ষুধাও অন্তরতর, তার খাদ্যও অন্তরতর, তার তৃপ্তিও
৬৮