বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শান্তিনিকেতন

আমি হিমালয় পর্বত দেখব’, তবে তাকে এ কথা বলতে হয় না যে ‘আগে তোমার চোখদুটোকে মস্ত বড়ো করে তোলও তবে তোমাকে পর্বত সমুদ্র দেখিয়ে দিতে পারব’। কিন্তু, সেই মূঢ়ই যখন ভূবিদ্যার কথা জিজ্ঞাসা করে তখন তাকে বলতেই হয়, ‘একটু রোসো। গোড়া থেকে শুরু করতে হবে; আগে তোমার মনকে সংস্কারের আবরণ থেকে মুক্ত করো তবে এর মধ্যে তোমার অধিকার হবে। অর্থাৎ, চোখ মেললেই চলবে না, কান খুললেই হবে না, তোমাকে গুহার মধ্যে প্রবেশ করতে হবে।’ মূঢ় যদি বলে ‘না— আমি সাধনা করতে রাজি নই— আমাকে তুমি এ-সমস্তই চোখে-দেখা কানে-শোনার মতো সহজ করে দাও’, তবে তাকে হয় মিথ্যা দিয়ে ভোলাতে হয়, নয় তার অনুরোধে কর্ণপাত করাও সময়ের বৃথা অপব্যয় বলে গণ্য করতে হয়।

 তাই যদি হয় তবে উপনিষৎ যাঁকে ‘গুহাহিতং গহ্বরেষ্ঠং’ বলেছেন, যিনি গভীরতম, তাঁকে দেখাশোনার সামগ্রী করে বাইরে এনে ফেলবার অদ্ভুত আবদার আমাদের খাটতেই পারে না। এই আবদার মিটিয়ে দিতে পারেন এমন গুরুকে আমরা অনেকসময় খুঁজে থাকি, কিন্তু যদি কোনো গুরু বলেন ‘আচ্ছ। বেশ। তাঁকে খুব সহজ করে দিচ্ছি'— ব’লে সেই যিনি ‘নিহিতং গুহায়াং’ তাঁকে আমাদের চোখের সমুখে যেমন খুশি এক রকম করে দাঁড় করিয়ে দেন, তা হলে বলতেই হবে, তিনি অসত্যের দ্বারা গোপনকে আরও গোপন করে দিলেন। এরকম স্থলে শিষ্যকে এই কথাটাই বলবার কথা যে, মানুষ যখন সেই গুহাহিতকে, সেই গভীরকে চায়, তখন তিনি গভীর ব’লেই তাঁকে চায়। সেই গভীর আনন্দ আর-কিছুতে মেটাতে পারে না ব’লেই তাঁকে চায়। চোখে-দেখা কানে-শোনার সামগ্রী জগতে যথেষ্ট আছে, তার জন্যে

৭২