পাতা:শান্তিনিকেতন (১৯৩৪ প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দুঃখ
১৫

মধ্যে পরিবৃত হয়ে থাকে। তাতে কী হয়? তাতে সে নিজেকে পঙ্গু করে ফেলে; নিজের হাত-পায়ের উপর তার অধিকার থাকে না, যেসমস্ত শক্তি নিয়ে সে পৃথিবীতে জন্মেছিল সেগুলি কর্ম অভাবে পরিণত হতে পারে না— মুষড়ে যায়, বিগড়ে যায়। স্বরচিত আবরণের মধ্যে সে একটি কৃত্রিম জগতে বাস করে। কৃত্রিম জগৎ আমাদের প্রকৃতিকে কখনোই তার সমস্ত স্বাভাবিক খাদ্য জোগাতে পারে না; এইজন্যে সে অবস্থায় আমাদের স্বভাব একটি ঘর-গড়া পুতুলের মতো হয়ে ওঠে, পূর্ণতালাভ করে না।

 দুঃখের আঘাত থেকে আমাদের মনকে ভয়ে ভয়ে কেবলই বাঁচিয়ে রাখবার চেষ্টা করলে জগতে আমাদের অসম্পূর্ণভাবে বাস করা হয়, সুতরাং তাতে কখনোই আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষা ও শক্তির পরিণতি হয় না। পৃথিবীতে এসে যে ব্যক্তি দুঃখ পেলে না সে লোক ঈশ্বরের কাছ থেকে তার সব পাওনা পেলে না— তার পাথেয় কম পড়ে গেল।

 যাদের স্বভাব অতিবেদনাশীল, আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সবাই তাদের বাঁচিয়ে চলে; সে ছোটোকে বড়ো করে তোলে ব’লেই লোকে কেবলই বলে ‘কাজ নেই’— তার সম্বন্ধে লোকের কথাবার্তা ব্যবহার কিছুই স্বাভাবিক হয় না। সে সব কথা শোনে না কিম্বা ঠিক কথা শোনে না— তার যা উপযুক্ত পাওনা তা সে সবটা পায় না কিম্বা ঠিকমত পায় না। এতে তার মঙ্গল হতেই পারে না। যে ব্যক্তি বন্ধুর কাছ থেকে কখনও আঘাত পায় না, কেবলই প্রশ্রয় পায়, সে হতভাগ্য বন্ধুত্বের পূর্ণ আস্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়— বন্ধুরা তার সম্বন্ধে পূর্ণরূপে বন্ধু হয়ে উঠতে পারে না।

 জগতে এই-যে আমাদের দুঃখের পাওনা এ-যে সম্পূর্ণ ন্যায়সংগত হবেই তা নয়। যাকে আমরা অন্যায় বলি, অবিচার বলি, তাও আমাদের গ্রহণ করতে হবে— অত্যন্ত সাবধানে লূক্ষ্ম হিসাবের খাতা খুলে কেবল-