পাতা:শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষার মিলন
২৪৩

হােক, তারা তাে তত্ত্ব নয়; তাই তারা মানুষের আত্মাকে বাদ দিয়ে সকল ব্যবস্থা করে।

 তত্ত্ব কাকে বলে? যিশু বলেছেন: আমি আর আমার পিতা এক। এ হল তত্ত্ব। পিতার সঙ্গে আমার যে ঐক্য সেই হল সত্য ঐক্য, ম্যানেজারের সঙ্গে কুলির যে ঐক্য সে সত্য ঐক্য নয়।

 চরম তত্ত্ব আছে উপনিষদে—

ঈশাবাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্‌ধনম্।

 পশ্চিমসভ্যতার অন্তরাসনে লােভ রাজা হয়ে বসেছে, পূর্বেই তার নিন্দা করেছি। কিন্তু, নিন্দাটা কিসের? ঈশােপনিষদে তত্ত্বস্বরূপে এরই উত্তরটি দেওয়া হয়েছে। ঋষি বলেছেন: মা গৃধঃ। লােভ কোরাে না। কেন করব না? যেহেতু লােভে সত্যকে মেলে না। নাই-বা মিলল, আমি ভােগ করতে চাই। ভােগ কোরাে না, এ কথা তাে বলা হচ্ছে না। ভুঞ্জীথাঃ, ভােগই করবে; কিন্তু সত্যকে ছেড়ে আনন্দকে ভােগ করবার পন্থা নেই। তা হলে সত্যটা কী? সত্য হচ্ছে এই: ঈশাবাস্যমিদং সর্বম্। সংসারে যা-কিছু চলছে সমস্ত ঈশ্বরের দ্বারা আচ্ছন্ন। যা-কিছু চলছে সেইটেই যদি চরম সত্য হত, তার বাইরে আর-কিছুই না থাকত, তা হলে চলমান বস্তুকে যথাসাধ্য সংগ্রহ করাই মানুষের সব চেয়ে বড়াে সাধনা হত। তা হলে লােভই মানুষকে সব চেয়ে বড়ো চরিতার্থতা দিত। কিন্তু ঈশ সমস্ত পূর্ণ করে রয়েছেন এইটেই যখন শেষ কথা তখন আত্মার দ্বারা এই সত্যকে ভােগ করাই হবে পরম সাধনা। আর, তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথাঃ। ত্যাগের দ্বারাই এই ভােগের সাধন হবে, লােভের দ্বারা নয়। সাত মাস ধরে আমেরিকায় আকাশের বক্ষোবিদারী ঐশ্বর্যপুরীতে বসে এই সাধনার উল্‌টোপথে চলা দেখে এলেম। সেখানে ‘যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ’ সেটাই মস্ত হয়ে প্রকাশ পাচ্ছে, আর ‘ঈশাবাস্যমিদং সর্বম্’ সেইটেই ডলারের ঘন ধুলায় আচ্ছন্ন। এইজন্যেই সেখানে ‘ভুঞ্জীথাঃ’ এই বিধানের পালন সত্যকে