পাতা:শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৪
শিক্ষা

সরকারি খেয়াও কি তাদের কপালে জুটবে না— একটা লাইসেন্স্-দেওয়া পান্সি, মােটর-চালিত নাই-বা হল, নাহয় হল দিশি হাতে-দাঁড়-টানা?

 অন্য স্বাধীন দেশের সঙ্গে আমাদের একটা মস্ত প্রভেদ আছে। সেখানে শিক্ষার পূর্ণতার জন্যে যারা দরকার বােঝে তারা বিদেশী ভাষা শেখে। কিন্তু, বিদ্যার জন্যে যেটুকু আবশ্যক তার বেশি তাদের না শিখলেও চলে। কেননা, তাদের দেশের সমস্ত কাজই নিজের ভাষায়। আমাদের দেশের অধিকাংশ কাজই ইংরেজি ভাষায়। যাঁরা শাসন করেন তাঁরা আমাদের ভাষা শিখতে, অন্তত যথেষ্ট পরিমাণে শিখতে, বাধ্য নন। পর্বত নড়েন না, কাজেই সচল মানুষকেই প্রয়ােজনের গরজে পর্বতের দিকে নড়তে হয়। ইংরেজি ভাষা কেবল যে আমাদের জানতে হবে তা নয়, তাকে ব্যবহার করতে হবে। সেই ব্যবহার বিদেশী আদর্শে যতই নিখুঁত হবে সেই পরিমাণেই স্বদেশীদের এবং কর্তাদের কাছে আমাদের সমাদর। আমি একজন ইংরেজ ম্যাজিস্‌ট্রেটকে জানতুম; তিনি বাংলা সহজেই পড়তে পারতেন। বাংলাসাহিত্যে তাঁর রুচির আমি প্রশংসা করবই; কারণ, রবীন্দ্রনাথের রচনা তিনি পড়তেন এবং পড়ে আনন্দ পেতেন। একবার গ্রামবাসীদের এক সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। গ্রামহিতৈষী বাঙালি বক্তাদের মধ্যে যার যা বক্তব্য ছিল বলা হলে পর ম্যাজিস্‌ট্রেটের মনে হল, গ্রামের লােককে বাংলায় কিছু বলা তাঁরও কর্তব্য। কোনাে প্রকারে দশ মিনিট কর্তব্য পালন করেছিলেন। গ্রামের লােকেরা বাড়ি ফিরে আত্মীয়দের জানালাে যে, সাহেবের ইংরেজি বক্তৃতা এইমাত্র তারা শুনে এসেছে। পরভাষা ব্যবহার সম্বন্ধে বিদেশীর কাছে খুব বেশি আশা না করলেও তাকে অসম্মান করা হয় না। ম্যাজিস্‌ট্রেট নিজেই জানতেন তাঁর বাংলাকথনের ভাষা এমন নয় যে, গৌড়জন আনন্দে যার অর্থবােধ করতে পারে সম্যক্‌। তাই নিয়ে তিনি হেসেওছিলেন। আমরা হলে কিছুতেই হাসতে পারতুম না, ধরণীকে অনুনয় করতুম দ্বিধা হতে। ইংরেজি সম্বন্ধে আমাদের বিদেশিত্বের কৈফিয়ত আত্মীয় বা অনাত্মীয়- সমাজে গ্রাহ্য হয় না। একদা