পাতা:শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছাত্রসম্ভাষণ
৩২৯

করে, অবমানিত করে, সেখানে ঘর-গড়া অহংকারে নিজেকে ভােলাবার চেষ্টা দুর্বল চিত্তের দুর্লক্ষণ। সত্যকার কাজ আরম্ভ করার মুখে এ কথা মানাই চাই যে, আমাদের সমাজে, আমাদের স্বভাবে, আমাদের অভ্যাসে, আমাদের বুদ্ধিবিকারে গভীরভাবে নিহিত হয়ে আছে আমাদের সর্বনাশ। যখনই আমাদের দুর্গতির সকল দায়িত্ব একমাত্র বাহিরের অবস্থার অথবা অপর কোনাে পক্ষের প্রতিকূলতার উপর আরােপ করে বধির শূন্যের অভিমুখে তারস্বরে অভিযােগ ঘােষণা করি তখনই হতাশ্বাস ধৃতরাষ্ট্রের মতো মন ব’লে ওঠে: তদা নাশংসে বিজয়ায় সঞ্জয়।

 আজ আমাদের অভিযান নিজের অন্তর্নিহিত আত্মশত্রুতার বিরুদ্ধে; প্রাণপণ আঘাত হানতে হবে বহুশতাব্দীনির্মিত মূঢ়তার দুর্গভিত্তিমূলে। আগে নিজের শক্তিকে তামসিকতার জড়িমা থেকে উদ্ধার ক’রে নিয়ে তার পরে পরের শক্তির সঙ্গে আমাদের সম্মানিত সন্ধি হতে পারবে। নইলে আমাদের সন্ধি হবে ঋণের জালে, ভিক্ষুকতার জালে আষ্টেপৃষ্ঠে আড়ষ্টকর পাকে জড়িত। নিজের শ্রেষ্ঠতার দ্বারাই অন্যের শ্রেষ্ঠতাকে আমরা জাগাতে পারি, তাতেই মঙ্গল আমাদের ও অন্যের। দুর্বলের প্রার্থনা যে কুণ্ঠাগ্রস্ত দান সঞ্চয় করে সে দান শতছিদ্র ঘটের জল, যে আশ্রয় পায় চোরাবালিতে সে আশ্রয়ের ভিত্তি।

হে বিধাতা,
দাও দাও মােদের গৌরব দাও
দুঃসাধ্যের নিমন্ত্রণে
দুঃসহ দুঃখের গর্বে।
টেনে তোলাে রসাক্ত ভাবের মােহ হতে।
সবলে ধিক্‌কৃত করাে দীনতার ধুলায় লুণ্ঠন।
দূর করাে চিত্তের দাসত্ববন্ধ,
ভাগ্যের নিয়ত অক্ষমতা,