পাতা:শিক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
শিক্ষা

ভালো করিয়া শেখানো হইত না। ছেলেরা বিদেশের ইতিহাস ও ভূবৃত্তান্ত শিখিয়া নিজের দেশের সম্বন্ধে অজ্ঞ থাকিত।

 ইহার ফল যেমন হওয়া উচিত, তাহাই হইল। মানসিক জড়তা সমস্ত দেশে ব্যাপ্ত হইয়া গেল। আইরিশভাষী ছেলেরা বুদ্ধি এবং জিজ্ঞাসা লইয়া বিদ্যালয়ে প্রবেশ করিল, আর বাহির হইল পঙ্গু মন এবং জ্ঞানের প্রতি বিতৃষ্ণা লইয়া।

 ইহার কারণ এ শিক্ষাপ্রণালী কলের প্রণালী, ইহাতে মন খাটে না, ছেলেরা তোতাপাখি বনিয়া যায়।

 এই প্রাথমিক শিক্ষার পর মাধ্যমিক শিক্ষা: Intermediate Education। আটাশ বৎসর ধরিয়া আয়র্লন্‌ডে সেই মাধ্যমিক শিক্ষার পরখ করা হইয়াছে। তাহার ফলস্বরূপ বিদ্যাশিক্ষা সেখানে একেবারে দলিত হইয়া গেল। পরীক্ষাফলের প্রতি অতিমাত্র লোভ করিয়া, কলেজে শেখাইবার চেষ্টা হয় না―কেবল গেলাইবার আয়োজন হয়। ইহাতে হাজার হাজার আইরিশ ছাত্রের স্বাস্থ্য নষ্ট এবং বুদ্ধি বন্ধ্যা হইয়া যাইতেছে। অতিশ্রমের দ্বারা অকালে তাহাদের মন জীর্ণ হইয়া যায় এবং বিদ্যার প্রতি তাহাদের অনুরাগ থাকে না।

 এই বিদ্যাবিভ্রাটের প্রতিকারস্বরূপ আইরিশ জাতি কী প্রার্থনা করিতেছে? তাহারা বিপ্লব বাধাইতে চায় না, দেশের বিদ্যাশিক্ষার ভার তাহারা নিজের হাতে চালাইতে চায়। ব্যয়ের জন্যও কর্তৃপক্ষকে বেশি ভাবিতে হইবে না। শিক্ষাব্যয়ের জন্য আয়র্লন্‌ডের যে বরাদ্দ নির্দিষ্ট হইতেছে তাহা অতি যৎসামান্য। ইংলন্‌ডে পুলিস এবং আদালতে যে খরচ হয় তাহার প্রত্যেক পাউন্‌ডের হারে বিদ্যাশিক্ষায় আট পাউন্‌ড খরচ হইয়া থাকে। আর আয়র্লন্‌ডে যেখানে অপরাধের সংখ্যা তুলনায় অত্যন্ত কম, সেখানে পুলিস ও আদালতের বরাদ্দের প্রত্যেক পাউন্‌ডের অনুপাতে বিদ্যাশিক্ষায় তেরো শিলিং চার পেন্‌স্ মাত্র ব্যয় ধরা হইয়াছে।

 ঠিক একটা দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সকল অংশে তুলনা হইতেই পারে না। আয়র্লন্‌ডের শিক্ষানীতি যে ভাবে চলিয়াছিল, ভারতবর্ষেও যে ঠিক