পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাধারণের সাহিত্য ও ভাষা

 মারাঠী জন-সাহিত্যও এই জাতীয় একতা-বন্ধনের সহায় হইল। তুকারাম ও রামদাস, বামন পণ্ডিত ও মোরো পন্ত প্রভৃতি সন্ত-কবির সরল মাতৃভাষায় রচিত গীত ও নীতিবচনগুলি ঘরে ঘরে পৌঁছিল। “দক্ষিণদেশ ও কোঁকনের প্রত্যেক শহর ও গ্রামে, প্রধানতঃ বষাকালে, ধার্ম্মিক মারাঠা-গৃহস্থ পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবর্গ লইয়া শ্রীধর কবির “পোথী” পাঠ শোনে। ভাবাবেশে তাহারা উৎকর্ণ হইয়া শুনিতে থাকে, মাঝে মাঝে কেহ হাসে, কেহ দুঃখের শ্বাস ফেলে, কেহ বা কাঁদে। যখন চরম করুণ রসের বর্ণনা আসে তখন শ্রোতারা একসঙ্গে দুঃখে কাঁদিয়া উঠে, পাঠকের গলা আর শুনা যায় না।”

[একবার্থ]

 প্রাচীন মারাঠ কবিতায় সুদীর্ঘ গুরুগম্ভীর পদলালিত্য ছিল না, ভাবোচ্ছ্বাসময় বীণার ঝঙ্কার ছিল না, কথার মারপেঁচ ছিল না। নিরক্ষর জনসাধারণের প্রিয় পদ ছিল ‘পোবাড়া’ অর্থাৎ ‘কথা’ (ব্যালাড্)। ইহাতেই জাতীয় চিত্তের স্ফুরণ হইয়াছে। দাক্ষিণাত্যের সমতলক্ষেত্র, সহ্যাদ্রির গভীর উপত্যকা এবং উচ্চগিরিশ্রেণী —সর্ব্বত্রই গ্রামে গ্রামে দরিদ্র ‘গোন্ধালী-গণ (অর্থাৎ, চারণেরা) ভ্রমণ করে, এখনও সেই অতীত যুগের ঘটনা লইয়া ‘কথা ও কাহিনী’ গান করে,—যখন তাহাদের পূর্ব্বপুরুষেরা অস্ত্রবলে সমগ্র ভারত জয় করিয়াছিল, কিন্তু অবশেষে সমুদ্রপার হইতে আগত বিদেশীর কাছে আহত বিধ্বস্ত হইয়া দেশে পলাইয়া আসিয়াছিল। গ্রামবাসীরা ভিড় করিয়া সেই কাহিনী শুনিতে থাকে, কখন-বা মুগ্ধ, নীরব থাকে, কখন-বা উল্লাসে উন্মত্ত হয়।”

[একবার্থ]

 মারাঠী জনসাধারণের ভাষা আড়ম্বরপূন্য, কর্কশ,কেবলমাত্র কাজের