পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজ্যাভিষেক
১২৭

তাঁহাকেই মানিবে, অন্য কোন প্রভুর ক্ষমতা স্বীকার করিবে না। ইহা ভিন্ন মহারাষ্ট্রের সকল উচ্চমনা দেশসেবকই দেশে স্বাধীন হিন্দু রাজত্ব “হিন্দরী স্বরাজ”—স্থাপনের জন্য উৎসুক হইয়াছিল। একমাত্র শিবাজীই এই জাতীয় বাঞ্ছা পূরণ করিতে পারেন।

অভিষেকের আয়োজন

 কিন্তু শাস্ত্র অনুসারে ক্ষত্রিয় ভিন্ন অন্য কোন জাতের লোক হিন্দুরাজা হইতে পারে না; অথচ সে যুগে সমাজে ভোঁশলে বংশকে শুদ্র বলিয়া গণ্য করা হইত। তখন শিবাজীর মুনশী বালাজী আবজী মারাঠা জাতির সর্ব্বশ্রেষ্ঠ পণ্ডিত কাশীবাসী বিশ্বেশ্বর ভট্ট (ডাক-নাম গাগা ভট্ট)কে অনেক টাকা দিয়া হাত করিলেন। ভট্ট মহাশয় শিবাজীর ক্ষত্রিয়ত্ব প্রমাণ করিয়া এবং তাঁহার আদি পুরুষ যে সূর্য্যবংশীয় চিতোরের মহারাণার পুত্র—ইহা স্বীকার করিয়া এক পাতি লিখিয়া দিলেন এবং তাঁহার অভিষেক-ক্রিয়ায় প্রধান পুরোহিত হইতে সম্মত হইলেন। গাগা ভট্ট দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত-“চারি বেদ ও ছয়শান্ত্রে যোগাভ্যাস-সম্পন্ন, জ্যোতিষী, মন্ত্রিক, সর্ব্ববিদ্যায় পারদর্শী, কলিযুগের ব্রহ্মদেব” [সভাসদ বখর]। তাঁহার বিরুদ্ধে তর্ক করিতে পারে এমন শক্তি বা সাহস মহারাষ্ট্রে তখন কোন ব্রাহ্মণের ছিল না। সুতরাং শাস্ত্রীয় তর্কে পরাস্ত হইবার ভয়ে এবং মোটা দক্ষিণার লোভে সকলেই শিবাজীর ক্ষত্রিয়ত্ব স্বীকার করিল।

 তাহার পর কয়েকমাস ধরিয়া মহাব্যয়ে অভিষেকের নানা আয়োজন করা হইল। ভারতবর্ষের সকল প্রদেশেরই পণ্ডিতরা নিমন্ত্রিত হইলেন। সে সময় রাস্তা-ঘাট এবং ভ্রমণের সুবিধা ছিল না বলিয়াই হয়; তথাপি এগার হাজার ব্রাহ্মণ—তাঁহাদের স্ত্রীপুত্র লইয়া পঞ্চাশ হাজার লোক—রায়গড়-দুর্গে উপস্থিত হইল এবং চারি মাস ধরিয়া রাজার খরচে মিঠাই-পক্কান্ন খাইতে থাকিল।