পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
শিবাজী
৫৪

অথবা চৌথ আদায় চলিতে লাগিল। এই প্রদেশটি তীর্থবহুল, তাহার মধ্যে পরশুরামক্ষেত্র অতি বিখ্যাত। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ হইতে যাত্রীরা এখানে তীর্থ-পর্য্যটনে আসে। এদেশে ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতদের বাসই অধিক। শিবাজীর সৈন্যগণের দ্রুত গতি, অজেয় শক্তি, লুটপাট এবং কঠোর পীড়নের সংবাদে ভদ্র রাহ্মণ পরিবার, গরিব গৃহস্থ ও প্রজা সকলেই দেশ ছাড়িয়া পলাইতে লাগিল। চাষবাস বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হইল। তখন শিবাজী তীর্থক্ষেত্রে গিয়া অনেক পূজা করিলেন,ব্রাহ্মণদের দান দিলেন, এবং প্রজাদের আশ্বাস দিয়া নিজ নিজ গৃহে ও কার্য্যে ফিরাইয়া আনিলেন। এই নূতন শাসন-স্থাপনে সাহায্য পাইবার আশায় শিবাজী শৃঙ্গারপুর-রাজ্য অধিকার করিবার পর তথাকার প্রভাবশালী ও অভিজ্ঞ ভূতপূর্ব্ব মন্ত্রী এবং (কার্য্যতঃ সর্ব্বেসর্ব্বা) পিলাজী শির্কেকে অর্থ ও ক্ষমতা দিয়া স্বপক্ষে আনিলেন, এমন কি তাঁহার সঙ্গে বিবাহ-সম্বন্ধও স্থাপন করিলেন। এইরূপে পল্লীবন ও শৃঙ্গারপুর-রাজ্য এবং দাভোল, সঙ্গমেশ্বর, রাজাপুর প্রভৃতি সমৃদ্ধিশালী শহর-বন্দর স্থায়িভাবে শিবাজীর হাতে আসিল। ঐ প্রদেশের অন্যান্য অগণিত নগর হইতে চৌথ আদায় হইল।

 কিন্তু মে মাসে মুঘলেরা উত্তর-কোঁকনে কল্যাণ শহর (রাজধানী) অধিকার করিল এবং তাহা নয় বৎসর পর্য্যন্ত নিজের দখলে রাখিল। ইহার পর প্রায় দুই বৎসর কাল (মে ১৬৬১-মার্চ্চ ১৬৬৩) মুঘল-মারাঠা যুদ্ধ মন্দবেগে চলিতে লাগিল, কোন পক্ষেই বিশেষ কোন কীর্ত্তি অথবা চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকর জয়-পরাজয় হইল না। দ্রুতগামী মারাঠা-অশ্বরোহিগণ মাঝে মাঝে মুঘল-রাজ্য লুট করিতে লাগিল বটে, কিন্তু মোটের উপর মুঘলেরা নিজ অধিকার বজায় রাখিতে এবং কখন কখন পাল্‌টিয়া মারাঠা গ্রামের উপর চড়াও হইতে সমর্থ হইল।