অথবা চৌথ আদায় চলিতে লাগিল। এই প্রদেশটি তীর্থবহুল, তাহার মধ্যে পরশুরামক্ষেত্র অতি বিখ্যাত। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ হইতে যাত্রীরা এখানে তীর্থ-পর্য্যটনে আসে। এদেশে ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতদের বাসই অধিক। শিবাজীর সৈন্যগণের দ্রুত গতি, অজেয় শক্তি, লুটপাট এবং কঠোর পীড়নের সংবাদে ভদ্র রাহ্মণ পরিবার, গরিব গৃহস্থ ও প্রজা সকলেই দেশ ছাড়িয়া পলাইতে লাগিল। চাষবাস বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হইল। তখন শিবাজী তীর্থক্ষেত্রে গিয়া অনেক পূজা করিলেন,ব্রাহ্মণদের দান দিলেন, এবং প্রজাদের আশ্বাস দিয়া নিজ নিজ গৃহে ও কার্য্যে ফিরাইয়া আনিলেন। এই নূতন শাসন-স্থাপনে সাহায্য পাইবার আশায় শিবাজী শৃঙ্গারপুর-রাজ্য অধিকার করিবার পর তথাকার প্রভাবশালী ও অভিজ্ঞ ভূতপূর্ব্ব মন্ত্রী এবং (কার্য্যতঃ সর্ব্বেসর্ব্বা) পিলাজী শির্কেকে অর্থ ও ক্ষমতা দিয়া স্বপক্ষে আনিলেন, এমন কি তাঁহার সঙ্গে বিবাহ-সম্বন্ধও স্থাপন করিলেন। এইরূপে পল্লীবন ও শৃঙ্গারপুর-রাজ্য এবং দাভোল, সঙ্গমেশ্বর, রাজাপুর প্রভৃতি সমৃদ্ধিশালী শহর-বন্দর স্থায়িভাবে শিবাজীর হাতে আসিল। ঐ প্রদেশের অন্যান্য অগণিত নগর হইতে চৌথ আদায় হইল।
কিন্তু মে মাসে মুঘলেরা উত্তর-কোঁকনে কল্যাণ শহর (রাজধানী) অধিকার করিল এবং তাহা নয় বৎসর পর্য্যন্ত নিজের দখলে রাখিল। ইহার পর প্রায় দুই বৎসর কাল (মে ১৬৬১-মার্চ্চ ১৬৬৩) মুঘল-মারাঠা যুদ্ধ মন্দবেগে চলিতে লাগিল, কোন পক্ষেই বিশেষ কোন কীর্ত্তি অথবা চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকর জয়-পরাজয় হইল না। দ্রুতগামী মারাঠা-অশ্বরোহিগণ মাঝে মাঝে মুঘল-রাজ্য লুট করিতে লাগিল বটে, কিন্তু মোটের উপর মুঘলেরা নিজ অধিকার বজায় রাখিতে এবং কখন কখন পাল্টিয়া মারাঠা গ্রামের উপর চড়াও হইতে সমর্থ হইল।