পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জয়সিংহ ও শিবাজী
৬৯

আওরংজীব অনেক ভাবিয়া শিবাজীকে দমন করিবার জন্য মীর্জা রাজা জয়সিংহ কাছোয়া (আম্বের, অর্থাৎ বর্ত্তমান জয়পুর-রাজ্যের অধিপতি)-কে নিযুক্ত করিলেন (৩০ সেপ্টেম্বর ১৬৬৪)। তাঁহার সঙ্গে বিখ্যাত পাঠানবীর দিলির খাঁ, আরব সেনানী দাউদ খাঁ, সুজন সিংহ বুন্দেলা ও অন্যান্য সেনাপতি এবং চৌদ্দ হাজার সৈন্য দেওয়া হইল।

জয়সিংহেব চরিত্র

 জয়সিংহ মধ্যযুগের ভারত-ইতিহাসের একটি অদ্বিতীয় পুরুষ। রাজপুত বলিলে আমরা সচরাচর বুঝি, কোন অসীমসাহসী, মান্যপ্রিয়, ধন ও স্বার্থে নিস্পৃহ, গোঁয়ারগোবিদ বীর ও ত্যাগী। জয়সিংহ যুদ্ধপটু ভয়হীন তেজী পুরুষ হইলেও সেই সঙ্গে কুটনীতিতে, সভ্যতা-ভব্যতায়, লোকজনকে হাত করিয়া কাজ হাসিল করিবার ক্ষমতাতেও কম পরিপক্ক ছিলেন না। ফলতঃ সম্ভ্রান্ত রাজপুত ও মুঘল—এই দুই শ্রেণীরই সব গুণগুলি তাঁহার মধ্যে একাধারে ছিল। বারো বৎসর বয়সে এই পিতৃহীন বালক মুঘলসেনাবিভাগে প্রবেশ করেন (১৬১৭); তাহার পর জাহাঙ্গীরের শেষকাল এবং শাহজাহানের সমগ্র রাজত্বের ইতিহাস তাঁহার কীর্ত্তিতে উজ্জ্বল। সুদুর আফঘানিস্থানের কান্দাহার হইতে পূর্ব্ব প্রান্তে মুঙ্গের পর্যন্ত, আর উত্তরে অক্‌শশ্, নদীর তীর হইতে দাক্ষিণাত্যে বিজাপুর পর্যন্ত, সর্ব্বত্রই মুঘল-সৈন্য লইয়া তিনি লড়িয়াছেন এবং সর্ব্বত্রই যশ লাভ করিয়াছেন। রাজনীতির চাল চালিতেও কম দক্ষ ছিলেন না। বাদশাহ সব বিপদে, সব কঠিন কাজে জয়সিংহের উপর নির্ভর করিতেন।

 এই ষাট বৎসর বয়সের প্রবীণ নেতা আজ দক্ষিণাত্যের এক জাগীরদারের পুত্রকে দমন করিতে আসিলেন। কিন্তু তাঁহার ভাবনার অন্ত ছিল না। কি মুঘল, কি বিজাপুরী সেনানী, কেহই শিবাজীকে এ পর্য্যত পরাস্ত করিতে পারেন নাই; শায়েস্তা খাঁ, যশোবন্ত পর্য্যন্ত হারিয়া