পাতা:শুভাশুভ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনানে দুধ চাপিয়ে জাল দিতে দিতে সেটা ক্ষীর হয়ে যায়। অনেকের প্রাণের কড়ায়ে স্নেহ মায়া বন্ধুত্বের জীবনামৃত ঘন ক্ষীর হয়ে । পোড়া লেগে নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে বেঁচে থাকার অর্থ হয় না । অথচ এত বড় সংসারের এতগুলি নিরুপায় মানুষকে বঁাচাবার জন্য জীবন পাত চেষ্টা না করারও কোন অর্থ হয় না । বঁাচার মানে তবে কি ? এভাবে ছাপাখানা আর বই ছাপানোর ব্যবসা চালিয়ে লাখপতি হতে পারলেই কি সে মনে করতে পারবে জীবনটা তার সার্থক হযেছে ? শরৎকালীন সাৰ্বজনীন পুজার দিন এসে গেছে। ষষ্ঠীর দিন প্রেস আর বই ছাপানো বিভাগের সকলে তাকে ঘিরে দাড়ানোয় তার মাথাটা প্ৰায খারাপ হয়ে যেতে বসেছিল । কে জানে কি কাণ্ড করত । নন্দিতা সামনে ছিল । সমরেশকে পিছনে ঠেলে দিযে সামনে এগিযে নন্দিতা মিষ্টি সুরে বলে, ওদের কথা দিই যে আজ অর্ধেক দিন কাজ করে ফিরে যাবার সময় মাইনে বোনাস সব কিছু নিয়ে যাবে, ক’দিন ছুটি জেনে যাবে ? বলব ? তুমি একবার হুকুম দিলেই আমি ওদের বুঝিযে বলতে পারি, ঠাণ্ড করে দিতে পারি। সমরেশ বিমিয়ে গিয়ে বলে, বলে । তোমরাও যখন ওদের পক্ষ নিয়ে সামনে এগিয়ে এসেছ-আমার আর কি বলার আছে, কি করার আছে । নন্দিতার ঘোষণা শুনে সকলে শান্তভাবে নিজের নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে কাজ আরম্ভ করলে নন্দিতা বলে, এমন মন হয়ে গেছে তোমার ? ওরা গরীব মানুষ, পূজার আগে টাকা না পেলে ওদের পূজার আনন্দ মাটি হয়ে যাবে-তুমি ওদের মাইনে বোনাস আটকে দেবার মতলব করেছি । তোমার একবার খেয়ালও হল না যে সে দিনকাল আর নেই, ওরা নিজেদের অধিকার বুঝতে শিখেছে, দাবী দাওয়া আদায় করতে শিখেছে। RRYS