পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গঙ্গার ধার, বাগানটা ডায়মণ্ড্‌ হার্‌বারের ওইদিকটাতে। ছোটো একটি স্টীম লঞ্চ্‌ ক’রে ঘণ্টা-দুয়েকের মধ্যে কোলকাতায় যাতায়াত করা যায়।’

 ‘আবার কোলকাতায় কী দরকার পড়ল?’

 ‘এখন কোনো দরকার নেই সে কথা জান। যাই বটে বার-লাইব্রেরিতে—ব্যাবসা করি নে, দাবা খেলি। অ্যাটর্নিরা বুঝে নিয়েছে, কাজে গরজ নেই, তাই মন নেই। কোনো আপসের মকদ্দমা হলে তার ব্রীফ আমাকে দেয়, তার বেশি আর কিছুই দেয় না। কিন্তু বিয়ের পরেই দেখিয়ে দেব কাজ কাকে বলে—জীবিকার দরকারে নয়, জীবনের দরকারে। আমের মাঝখানটাতে থাকে আঁঠি, সেটা মিষ্টিও নয়, নরমও নয়, খাদ্যও নয়; কিন্তু ওই শক্তটাই সমস্ত আমের আশ্রয়, ওইটেতেই সে আকার পায়। কোলকাতার পাথুরে আঁঠিটাকে কিসের জন্য দরকার বুঝেছ তো? মধুরের মাঝখানে একটা কঠিনকে রাখবার জন্যে।’

 ‘বুঝেছি। তা হলে দরকার তো আমারও আছে। আমাকেও কোলকাতায় যেতে হবে—দশটা-পাঁচটা।’

 ‘দোষ কী? কিন্তু পাড়া-বেড়াতে নয়, কাজ করতে।’

 ‘কিসের কাজ বলো। বিনা মাইনের?’

 ‘না না, বিনা মাইনের কাজ কাজও নয় ছুটিও নয়, বারোআনা ফাঁকি। ইচ্ছে করলেই তুমি মেয়ে-কলেজে প্রোফেসারি নিতে পারবে।’

 ‘আচ্ছা, ইচ্ছে করব। তার পর?’

১১১