পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ‘স্বভাব যদি বদলায় তবে পারবেন। কিন্তু বদলাবেই বা কেন? আমি তো তা চাই নে।'

 ‘তুমি কী চাও?

 ‘যতদিন পারি নাহয় ওঁর কথার সঙ্গে, ওঁর মনের খেলার সঙ্গে মিশিয়ে স্বপ্ন হয়েই থাকব। আর, স্বপ্নই বা তাকে বলব কেন? সে আমার একটা বিশেষ জন্ম, একটা বিশেষ রূপ, একটা বিশেষ জগতে সে সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে। নাহয় সে গুটি থেকে বের হয়ে আসা দু-চার দিনের একটা রঙিন প্রজাপতিই হল, তাতে দোষ কী? জগতে প্রজাপতি আরকিছুর চেয়ে যে কম সত্য তা তো নয়। নাহয় সে সূর্যোদয়ের আলোতে দেখা দিল আর সূর্যাস্তের আলোতে মরেই গেল, তাতেই বা কী? কেবল এইটুকুই দেখা চাই যে, সেটুক সময় যেন ব্যর্থ হয়ে না যায়।'

 ‘সে যেন বুঝলুম, তুমি অমিতর কাছে নাহয় ক্ষণকালের মায়া রূপেই থাকবে। আর নিজে? তুমিও কি বিয়ে করতে চাও না? তোমার কাছে অমিতও কি মায়া?'

 লাবণ্য চুপ করে বসে রইল, কোনো জবাব করলে না।

 যোগমায়া বললেন, 'তুমি যখন তর্ক কর তখন বুঝতে পারি তুমি অনেক-বই-পড়া মেয়ে। তোমার মতো কবে ভাবতেও পারি নে, কথা কইতেও পারি নে; শুধু তাই নয়, হয়তো কাজের বেলাতেও এত শক্ত হতে পারি নে। কিন্তু তর্কের ফাঁকের মধ্যে দিয়েও যে তোমাকে দেখেছি মা। সেদিন রাত তখন বারোটা হবে— দেখলুম, তোমার ঘরে আলো জ্বলছে।

৯০