পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মূর্তিটা খুব উঁচু করেই গড়ে তুলছেন।— 'এত বিদ্যে, এত বুদ্ধি, এত পাস, অথচ এমন সাদা মন! গুছিয়ে কথা বলবার কী অসামান্য শক্তি! আর, যদি চেহারার কথা বল, আমার চোখে তো লাবণ্যর চেয়ে ওকে অনেক বেশি সুন্দর ঠেকে। লাবণ্যর কপাল ভালো, অমিত কোন্ গ্রহের চক্রান্তে ওকে এমন মুগ্ধ চোখে দেখেছে! সেই সোনার চাঁদ ছেলেকে লাবণ্য এত করে দুঃখ দিচ্ছে! খামকা বলে বসলেন কিনা বিয়ে করবেন না। যেন কোন্‌ রাজরাজেশ্বরী! ধনুক-ভাঙা পণ! এত অহংকার সইবে কেন! পোড়ারমুখীকে যে কেঁদে কেঁদে মরতে হবে।'

 একবার যোগমায়া ভাবলেন, অমিতকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাবেন তাঁঁদের বাড়িতে। তার পরে কী ভেবে বললেন, ‘একটু বোসো বাবা, আমি এখনই আসছি।'

বাড়ি গিয়েই চোখে পড়ল লাবণ্য তার ঘরের সোফায় হেলান দিয়ে পায়ের উপর শাল মেলে গোর্কির ‘মা’ বলে গল্পের বই পড়ছে। ওর এই আরামটা দেখে ওঁর মনে মনে রাগ আরো বেড়ে উঠল।

 বললেন, 'চলো, একটু বেড়িয়ে আসবে।'  সে বললে, ‘কর্তামা, আজ বেরোতে ইচ্ছে করছে না।'

 যোগমায়া ঠিক বুঝলেন না যে, লাবণ্য নিজের কাছ থেকে ছুটে গিয়ে এই গল্পের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। সমস্ত দুপুরবেলা খাওয়ার পর থেকেই, তার মনের মধ্যে একটা অস্থির অপেক্ষা ছিল কখন আসবে অমিত। কেবলই মন বলেছে, এল বুঝি।

৯৬