পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় SS8 তোলা ছিল সে তখনি শুধু টের পেলুম। ঠাকুর-ঘরে গিয়ে কেঁদে বলতুম, গোবিন্দ, আর তা সইতে পারিনে, আমাদের মাকে ফিরিয়ে এনে দাও । আমার প্রার্থনা এতদিনে ঠাকুর মঞ্জুর করেছেন। আমার সেই মাকেই করবো অসম্মান এমন কথা। আপনি কি করে ভাবতে পারলেন মা ? এবার নতুন-মা আস্তে আস্তে বলিলেন, তবে কিসের অভিমানে খবর দাওনি বাবা ? দরওয়ানকে পাঠিয়ে যখন খোজ নিতে গেলুম তখন কিছু করবারই আর পথ রাখোনি । রাখাল সহস্যে কহিল, সেটা শুধু ভুলের জন্যে। অভ্যাস ত নেই, দুঃখের দিনে মনেই পড়েন। মা ত্রিসংসারে আমার কোথাও কেউ আছে। নতুন-মা উত্তর দিলেননা,-কেবল তাহার একটা হাত ধরিয়া আরো কাছে টানিয়া আনিয়া গভীর স্নেহে তাহার পিঠে হাত বুলাইয়া দিলেন। সারদা আড়ালে হইতে বোধহয় শুনিতেছিল, সুমুখে আসিয়া বলিল, দেবতাকে খেয়ে যেতে বলুননা মা, সেই তো বাসায় গিয়ে ওঁকে নিজেই রাধতে হবে । নতুম-মা বলিলেন, আমি কেন সারদা, তুমি নিজেই ত বলতে পারে। মা। তারপরে স্মিত-হাস্যে কহিলেন, এই কথাটি ও প্রায় বলে রাজু। তোমাকে যে আপনি রাঁধতে হয় এ-যেন ও সইতে পারেন-ওর বুকে বাজে । ওকে বঁচিয়েছিলে একদিন, এ কথা সারদা একটি দিন ভোলেন । পলকের জন্য রাখাল লজ্জায় আরক্ত হইয়া উঠিল, তিনি বলিতে লাগিলেন, এমন স্ত্রীকে যে কি কোয়ে তার স্বামী ফেলে দিয়ে গেলো। আমি তাই শুধু ভাবি । যত অঘটন কি বিধাতা মেয়েদের ভাগ্যেই লিখে দেন। এবং বলার সঙ্গে সঙ্গেই র্তাহার মুখ দিয়া দীর্ঘশ্বাস পড়িল । সারদা কহিল, এইবার ওঁকে একটি বিয়ে করতে বলুন মা। আপনার আদেশকে উনি কখনো না বলতে পারবেননা ।