পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QSS শেষের পরিচয় কনিষ্ঠ ভ্রাতা নবীনচন্দ্র ভ্রাতুষ্পপুত্ৰগণের মুখপাত্র স্বরূপ সম্মুখে আসিয়া জোড়করে ব্ৰজবাবুকে বলিলেন, মেজদা একটা কথা আপনাকে না জানালে নয় । মুখে আনতে যদিও বুক ফেটে যাচ্ছে তত্ত্ব না জানিয়েও উপায় নেই। আপনি ভরসা দিলে আমরা খুলে বলতে পারি। নিবিরোধী ব্ৰজবাবু ভ্ৰাতার এই সবিনয় ভূমিকায় চঞ্চল হইয়া উঠিলেন । বলিলেন, সে কি নবীন ! ভরসা আবার দেব কি ? বলে বলে, এখনি বলে ফেলো, কী তোমাদের সুবিধা-অসুবিধা হয়েছু ? তাই তো-কি মুস্কিল-তোমরা কিনা শেষকালে ব্ৰজবাবু সমস্ত কথা ভাষায় ব্যক্ত করিতে না পারিলেও তীক্ষ্মীবৃদ্ধি নবীনচন্দ্র এবং ভ্রাতুষ্পপুত্রদল তাহার মনোভাব বুঝিয়া লইলেন। উৎসা'হাত হইয়া নবীনবাবু আরও সাড়ম্বরে অতিবিনয় সমেত দীর্ঘ গৌরচফ্রিকা ফাদিলেন। বহু অবান্তর কথা এবং নিজেদের নির্দোষিতার ভূরি ভূরি প্রমাণ সহ যাহা জানাইলেন তাহার সার মৰ্ম্ম এই যে,-ব্ৰজবাবু ও রেণুকে যদি নবীনৰ্বাবুরা সংসারে স্থান দেন, তাহা হইলে গ্রামে তাহদের পতিত হইতে হইবে । গ্ৰামশুদ্ধ সকলেই জানে, এই রেণুকেই তিন বৎসরের শিশু অবস্থায় ফেলিয়া রাখিয়া তাহার জননী দূরসম্পর্কের নন্দই রমণীবাবুর সহিত প্ৰকাশ্যে কুলত্যাগ করিয়াছিলেন । মাত্ৰ বারো তেরো বৎসর পূর্বের ঘটনা। গ্রামের কেহই আজও তাহা বিস্মৃত হয় নাই। ব্ৰজবাবু বিবর্ণমুখে নতশিরে বসিয়া রহিলেন। তঁাঙ্গার সেই অসহায় মুখ দেখিলে অতিবড় কঠিন হৃদয়ও ব্যথিত না হইয়া পারেন । নবীনচন্দ্রেরও হৃদয়ে আঘাত লাগিল । কিন্তু তিনিই বা কি করিতে পারেন । একমাত্র আশা ছিল, ব্ৰজবাবু বিশিষ্ট অর্থশালী ব্যক্তি,-গ্রামে অর্থব্যয় করিতে পারিলে অনেকেরই মুখে চাপা দেওয়া যায়। কিন্তু, ব্ৰজবাবু আজ নিঃস্ব অর্থহীন। সুতরাং বয়স্থ কন্যাকে এতকাল অনূঢ়া রাখার অপরাধ গ্রামের