পাতা:শেষের পরিচয় - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষের পরিচয় শেষ কথা ? তাহার মুখের পরে ক্ৰোধ, করুণা, না তাচ্ছিল্য কিসের ছায়া যে নিঃসংশয়ে দেখা দিল বলা কঠিন। দেখিয়া ব্ৰজবাবুর তৎক্ষণাৎ স্মরণ হইল যে-অবাধ্য নতুন-বৌয়ের বিরুদ্ধে এইমাত্র তিনি অভিযোগ করিয়াছেন এ সেই । রাখালের মনে পড়িল ষেনতুন-মা বাল্যকালে তাহার হাত ধরিয়া নিজের স্বামী-গৃহে আনিয়াছিলেন ইনি সেই । লজ্জা ও বেদনায় অভিসঞ্চিত যে-গৃহের আলো-বাতাস স্নিগ্ধ হাস্য-পৰিহাসের মুক্তস্রোতে অভাবনীয় সহৃদয়তায় উজ্জল হইয়া আসিতেছিল, এক মুহূৰ্ত্তেই আবার তাহা শ্রাবণের অমানিশায় অন্ধকারের বোঝা হইয়া উঠিল । বাখাল ব্যস্ত হইয়া হঠাৎ উঠিয়া দাড়াইয়া বলিল, মা, অনেকক্ষণ তো আপনি পাণ খাননি ? আমার মনে ছিলনা। মা, অপরাধ হয়ে গেছে। নতুন-মা কিছু আশ্চৰ্য্য হইলেন-পাণ ? পাণের দরকার নেই বাবা । নেই বই কি ! ঠোঁট দুটি শুকিয়ে কালো হয়ে উঠেচে । কিন্তু আপনি ভাবচোন। এখুনি বুঝি হিন্দুস্থানী পাণ-বালার দোকানে ছুইবো । না মা, সে বুদ্ধি আমার আছে। এসো ত তারক, এই মোড়টার কাছে আমাকে একটু দাড়াবে, এই বলিয়া সে বন্ধুর হাতে একটা প্ৰচণ্ড টান দিয়া দ্রুতবেগে দুজনে ঘরের বাহিরে চলিয়া গেল । এইবার নিরালা গৃহের মধ্যে মুখোমুখি বসিয়া দুজনেই সঙ্কোচে মধিয়া গেলেন। নিঃসম্পৰ্কীয় যে-দুটি লোক মেঘখণ্ডের ন্যায় এতক্ষণ আকাশের সূৰ্য্যালোক বাধাগ্ৰস্ত রাখিয়াছিল, তাহদের অন্তধনের সঙ্গে সঙ্গেই বিনিম্মুক্ত রবি করে ঝাপসা কিছুই আর রছিলনা। স্বামী-স্ত্রীর গভীর ও নিকটতম সম্বন্ধ যে এমন ভয়ঙ্কর বিকৃত ও লজ্জাকর হইয়া উঠিতে পারে এই নিতৃত নির্জনতায় তাহ ধরা পড়িল। ইতিপূর্বের হাস্য-পরিহাসের অবতারণা যে কত অশোভন ও অসঙ্গত এ কথা ব্ৰজবাবুর মনে পড়িল,