ধীরে ধীরে বলিলেন, আর একটি কথা তোমাকে জিজ্ঞাসা করি কমল। পবিত্রতা-অপবিত্রতার জন্য বলচিনে, কিন্তু স্বভাবতঃ যে অন্য কিছু পারে না,—এই যেমন আমি। মণির স্বর্গীয়া জননীর স্থানে আর কাউকে বসাবার কথা আমি যে কখনো কল্পনা করতেও পারিনে।
কমল কহিল, আপনি যে বুড়ো হয়ে গেছেন আশুবাবু।
আশুবাবু বলিলেন, আজ বুড়ো হয়েচি মানি, কিন্তু সে দিন ত বুড়ো ছিলাম না। কিন্তু তখনো ত এ কথা ভাবতে পারিনি।
কমল কহিল, সেদিনও এমনি বুড়োই ছিলেন। দেহে নয়, মনে। এক এক জন থাকে যারা বুড়ো-মন নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। সেই বুড়োর শাসনের নীচে তাদের শীর্ণ, বিকৃত-যৌবন চিরদিন লজ্জায় মাথা হেঁট করে থাকে। বুড়ো-মন খুশী হয়ে বলে, আহা! এই ত বেশ! হাঙ্গামা নেই, মাতামাতি নেই,—এই ত শান্তি, এই ত মানুষের চরম তত্ত্বকথা। তার কত রকমের কত ভাল ভাল বিশেষণ, কত বাহবার ঘটা। দুই কান পূর্ণ করে তার খ্যাতির বাদ্য বাজে, কিন্তু এ যে তার জীবনের জয়বাদ্য নয়, আনন্দলোকের বিসর্জনের বাজনা, এ কথা সে জানতেও পারে না।
সকলেই মনে মনে চাহিলেন, ইহার একটা কড়া রকমের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন—মেয়েমানুষের মুখ দিয়া উন্মাদযৌবনের এই নির্লজ্জ স্তবগানে সকলের কানের মধ্যেই জ্বালা করিতে লাগিল, কিন্তু জবাব দিবার মত কথাও কেহ খুঁজিয়া পাইলেন না।
তখন আশুবাবু মৃদুকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন, কমল, বুড়ো-মন তুমি কাকে বল? দেখি নিজের সঙ্গে একবার মিলিয়ে এ সত্যিই সেই কি না।
কমল কহিল, মনের বার্ধক্য আমি তাকেই বলি আশুবাবু, যে-মন