পাতা:শেষ লীলা - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শেষ লীলা
২১

 আমার কথা শুনিয়া কর্ম্মচারী মহাশয় ত্রৈলোক্যের বন্ধন মোচন করিয়া দিতে কহিলেন। জনৈক প্রহরী আদেশমাত্র তাহার বন্ধন মোচন করিয়া দিল। আমার কথা শুনিয়া এবং আমার ব্যবহার দেখিয়া ত্রৈলোক্য আরপর যে কি পর্য্যন্ত সন্তুষ্ট হইল, তাহা আর আমি বলিতে পারি না। আমার কৃপায় সে এ যাত্রাও নিষ্কৃতি পাইল, এই ভাবিয়া সে অন্তরের সহিত আমাকে ধন্যবাদ প্রদান করিতে করিতে আমার পার্শ্বে আসিয়া দণ্ডায়মান হইল।

 সেই সময় অপরাপর কর্ম্মচারীগণকে সম্বোধন করিয়া কহিলাম, “আজ কয়েকদিবস পর্য্যন্ত আপনারা এই বাড়ীর ভাড়াটিয়াগণের মধ্যে যে সকল অনুসন্ধান করিয়াছেন, বা তাহাদিগের নিকট হইতে বাহা কিছু অবগত হইতে পারিছেন, তাহা ঠিক নহে। আমি জানিতে পারিয়াছি, ভীত হইয়া তাহারা কেহই প্রকৃত কথা কহে নাই। আমার বিবেচনা হয়, এখন তাহারা প্রকৃত কথা বলিবে। এই বাড়ীর সমস্ত ভাড়াটিয়াগণকে ডাকাইয়া পুনরায় তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়া দেখুন। দেখুন দেখি, এখন তাহারা প্রকৃত কথা বলে কি না? আর পূর্ব্বে তাহারা যে সকল কথা বলিয়াছে, বা আপনারা যাহা লিখিয়া লইয়াছেন, সেই সকল কাগজপত্র আর রাখিবার কোন প্রয়োজন নাই, সেই সকল কাগজপত্র পূর্ব্বেই নষ্ট করিয়া ফেলা আবশ্যক।” এই বলিয়া তাঁহাদিগের নিকট হইতে কতকগুলি কাগজ লইয়া, আমি সেই স্থানেই ছিঁড়িয়া ফেলিলাম। সকলে বুঝিতে পারিল যে, যে কাগজে ভাড়াটিয়াগণের জবানবন্দী লেখা হইয়াছিল, আমি সেই সকল কাগজ ছিঁড়িয়া ফেলিলাম; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি সেই সকল কাগজে হস্তক্ষেপ করিলাম না, কতকগুলি বাজে কাগজ ছিঁড়িয়া ফেলিলাম মাত্র।