পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্তু R চাবুক ও চারখানা চাকার সম্মিলিত সপাসাপ ও ঘড়ঘড় শব্দে অপরাহুবেলা৷ মুখরিত হইয়া উঠিল। কিন্তু সমস্ত চাপা দিয়া একটা ধরা-গলার চাপা। কান্নাই শুধু আমার কানে বাজিতে লাগিল। No দিন পাঁচ-ছয় পরে একদিন ভোরবেলায় একটা লোহার তোরঙ্গ এবং একটা পাতলা বিছানামাত্র অবলম্বন করিয়া কলিকাতার কয়লাঘাটে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। গাড়ী হইতে নামিতে-না-নামিতে, এক থাকি-কুতি-পরা কুলি আসিয়া এই দুটোকে ছো। মারিয়া লইয়া কোথায় যে চক্ষের পলকে অন্তর্ধান হইয়া গেল, খুজিতে খুজিতে দুশ্চিন্তায় চোখ ফাটিয়া জল না-আসা পর্যন্ত আর তাহার কোন সন্ধানই পাওয়া গেল না । গাড়িতে আসিতে আসিতেই দেখিয়াছিলাম, জেটি ও বড় রাস্তার অন্তর্বর্তী সমস্ত ভূখণ্ডটাই নানা রঙের পদার্থে বোঝাই হইয়া আছে। লাল, কালো, পাশুটে, গেরুয়া-একটু কুয়াসা করিয়াও ছিল-মনে হইল, একপাল বাছুব বোধ হয় বাধা আছে, চালান যাইবে। কাছে আসিয়া ঠাহর করিয়া দেখি, চালান যাইবে বটে, কিন্তু বাছুর নয়-মানুষ। মোটঘাট লইয়া, স্ত্রী-পুত্ৰেব হাত ধরিয়া সারারাত্রি অমনি করিয়া হিমে পড়িয়া আছে—প্ৰত্যুষে সর্বাগ্রে জাহাজের একটু ভালো স্থান অধিকার করিয়া লইবে বলিয়া। অতএব কাহার সাধ্য পরে আসিয়া ইহাদের অতিক্ৰম করিয়া জেটির দোরগোড়ায় যায়। অনতিকাল পরে এই দল যখন সজাগ হইয়া উঠিয়া দাড়াইল, তখন দেখিলাম, কাবুলের উত্তর হইতে কুমারিকার শেষ পর্যন্ত এই কয়লাঘাটে প্ৰতিনিধি পাঠাইতে কাহারও ভুল হয় নাই। সব আছে। কালে কালে গেঞ্জি গায়ে একদল চীনাও বাদ যায় নাই। আমিও নাকি ডেকের যাত্রী (অর্থাৎ যার নীচে আর নাই), সুতরাং ইহাদিগকে পরাস্ত করিয়া আমারও একটুখানি বসিবার জায়গা করিয়া লাইবার কথা । কিন্তু কথাটা মনে করিতেই আমার সর্বাঙ্গ হিম হইয়া