পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্তু er ভাবিলাম বলি, একে যদি ধৰ্ম্ম বলিয়াই বুঝিয়াছ ত এত নালিশ কিসের? আর যে ধৰ্ম্ম-কৰ্ম্মে মন প্ৰসন্ন না হইয়া গ্লানির ভারে অন্তর কালো হইয়া উঠিতে থাকে তাহাকে ধৰ্ম্ম বলিয়া গ্ৰহণ করাই যায় বা কিরূপে ? কিন্তু আমার বলিবার পূর্বেই রাজলক্ষ্মী নিজেই পুনশ্চ কহিল, কিন্তু এসব বিধি-ব্যবস্থা ক’রে গেছেন র্যারা ভঁরা ছিলেন ত্ৰিকালিদশী ঋষি ; শাস্ত্ৰবাক্য মিথ্যাও নয়, অমঙ্গলেরও নয়, আমরা কি-ই বা জানি, আব কতটুকুই বা বুঝি। ব্যস! যাহা বলিতে চাহিয়াছিলাম তাহা আর বলা হইল না। এসংসারে যাহা কিছু ভাবিবার বস্তু ছিল সমস্তই ত্রিকালজ্ঞ ঋষিরা অতীত, বৰ্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ এই তিনকালের জন্য বহু পূর্বেই ভাবিয়া স্থির করিয়া দিয়া গিয়াছেন, দুনিয়ায় নুতন করিয়া চিন্তা করিবার কোথাও কিছু বাকি নাই এ কথা রাজলক্ষ্মীর মুখে এই নূতন শুনিলাম না, আরও অনেকের মুখে অনেকবার শুনিয়াছি এবং বিবাববই চুপ করিয়া গিয়াছি । আমি জানি ইহার জবাব দিতে গেলেই আলোচনাটা প্ৰথমে উষ্ণ এবং পরীক্ষণেই ব্যক্তিগত কলহে নিরতিশয় তিক্ত হইয়া উঠে । ত্রিকালদশীদের আমি তাচ্ছিল্য করিতেছি না, রাজলক্ষ্মীর মত আমিও তঁদের অতিশয় ভক্তি করি ; শুধু এই কথাটাই ভাবি, তঁাহারা দয়া করিয়া যদি শুধু কেবল আমাদের এই ইংরাজি-আমলটার জন্য ভাবিয়া না যাইতেন, তাহা হইলে তঁাহাবাও অনেক দুরূহ চিন্তার দায় হইতে অব্যাহতি পাইতেন, আমরাও হয়ত সত্যসত্যই আজ বঁাচিতে পারিতাম । আমি পূর্বেই বলিয়াছি রাজলক্ষ্মী আমার মনের কথাগুলো যেন দর্পণের মত স্পষ্ট দেখিতে পাইত। কেমন করিয়া পাইত জানি না, কিন্তু এখন এই অস্পষ্ট দীপালোকে আমার মুখের চেহারাটার প্রতি দৃষ্টিপাত করে নাই, তবুও যেন আমার নিভৃত চিন্তার ঠিক দ্বারপ্রান্তেই আঘাত করিল। কহিল, তুমি ভাবছ এটা নিতান্তই বাড়াবাড়ি-ভবিষ্যতের বিধি ব্যবস্থা কেউ পূর্বাহুেই নিৰ্দেশ করে দিতে পারে না ; কিন্তু আমি বলছি পারে। আমার গুরুদেবের শ্ৰীমুখে শুনেছি, এ কাজ তারা না পারলে