পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R,t êv

  • আলোচনা করিবার মত গলায় জোর ছিল না বলিয়াই শুধু ঘাড় নাড়িয়া নিঃশব্দে সায় দিয়া মনে মনে সহস্রাবার বলিতে লাগিলাম, এই, এই, এই! কেবলমাত্ৰ এইজন্যই তেত্রিশ-কোটি নর-নারীর কণ্ঠ চাপিয়া বিদেশীয় শাসনতন্ত্র ভারতে প্ৰতিষ্ঠিত রহিয়াছে। শুদ্ধমাত্ৰ এইহেতুই ভারতের দিকে দিকে রন্ধে রন্ধে রেলপথ বিস্তারের আর বিরাম নাই । বাণিজ্যের নাম দিয়া ধনীর ধনভাণ্ডার বিপুল হইতে বিপুলতর করিবার এই অবিরাম চেষ্টায় দুকবি লের সুখ গেল, শান্তি গেল, অন্ন গেল, ধৰ্ম্ম গেলতাহার বাচিবার পথ দিনের পর দিন সঙ্কীণ ও নিরন্তর বোঝা দুৰ্বিবসহ হইয়া উঠিতেছে-এ সত্য ত কাহার চক্ষু হইতেই গোপন রাখিবার 6श नाई ।

বৃদ্ধ ভদ্রলোকটি আমার এই চিন্তাতেই যেন বাক্য যোজনা করিয়া কহিলেন, মশাই, ছেলেবেলায় মামার বাড়ীতে আমি মানুষ, আগে ঘিণ ক্রোশের মধ্যে রেলগাড়ী ছিল না, তখন কি সস্তা, আর কি প্ৰচুব জিনিসপত্ৰই না সেখানে ছিল । তখন কারও কিছু জন্মালে পাড়া-প্ৰতিবেশী সবাই ৩ার একটু ভাগ পেত। -- এখন থোড়, মোচা, উঠানের দু-আঁটি শাক পৰ্য্যন্ত কেউ কেউকে দিতে চায় না, বলে, থাক, সাড়ে আটটার গাড়ীতে পাইকেরের হাতে তুলে দিলে দু’পয়সা আসবে। এখন দেওয়ার নাম হয়েছে অপব্যয়মশাই, দুঃখের কথা বলতে কি, পয়সা করার নেশায় মেয়ে-পুরুষে সবাই যেন একেবারে ইতর হয়ে গেছে । আর আপনারাই কি প্রাণভরে ভোগ করতে পায় ? পায় না। শুধুত আত্মীয়-স্বজন প্ৰতিবেশী নয়, নিজেদেরও সকল দিক দিয়ে ঠকিয়ে-ঠকিয়ে টাকা পাওয়াটাই হয়েছে যেন তাদের একটি মাত্র পরমার্থ। এই সমস্ত আনিষ্ট্রের গোড়া হচ্ছে এই রেলগাড়ী। শিরার মত দেশের রন্ধে রন্ধে রেলের রাস্তা যদি না ঢুকতে পেতো, খাবার জিনিস চালান দিয়ে পয়সা রোজগারের এত সুযোগ না থাকতো, আর সেই লোভে মানুষ যদি এমন পাগল হয়ে না। উঠতো এত দুৰ্দশা দেশের হত না । রেলের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগও কম নহে। বস্তুতঃ যে ব্যবস্থায় মানুষের জীবনধারণের একান্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য-সম্ভার প্রতিদিন অপহৃত