পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত তথাপি যাইতেই হইবে, পিছাইলে চলিবে না এবং কালই। এই যাওয়াটা যে কি করিয়া সম্পন্ন করিব তাহাই ভাবিতেছিলাম। ছেলেবেলার একটা পথ জানি, সে অন্তহিত হওয়া । বিদায়-বাণী নয়, ফিরিয়া আসিবার স্তোকবাক্য নয়, কারণ প্ৰদৰ্শন নয়, প্রয়োজনের কৰ্ত্তব্যের বিস্তারিত বিবরণ নয়—শুধু আমি যে ছিলাম এবং আমি যে নাই, এই সত্য ঘটনাটা আবিষ্কারের ভার-ব্যাহারা রহিল তাহদের পরে নিঃশব্দে অৰ্পণ করা । স্থির করিলাম, ঘুমানো হইবে না, ঠাকুরের মঙ্গল আরতি সুরু হইবার পূর্বেই অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়া প্ৰস্থান করিব। একটা মুস্কিল, পুটুর পণেব টাকাটা ছোট ব্যাগ সমেত কমললতার কাছে আছে, কিন্তু সে থাক। হয় কলিকাতা, নয়। বৰ্ম্ম হইতে চিঠি লিখিব, তাহতে আরও একটা কাজ এই হইবে যে, আমাকে প্ৰত্যাৰ্পণ না করা পৰ্য্যন্ত কমললতাকে বাধ্য হইয়া এখানেই থাকিতে হইবে, পথেবিপথে বাহির হইবার সুযোগ পাইবে না। এদিকে যে-কেয়টা টাকা আমার জামার পকেটে পড়িয়া আছে কলিকাতায় পৌছিবার পক্ষে তাহাই যথেষ্ট । অনেক রাত্ৰি পৰ্যন্ত এমনি করিয়াই কাটিল, এবং ঘুমাইব না বলিয়া বার বার সঙ্কল্প করিলাম বলিয়াই বোধ করি কোন এক সময়ে ঘুমাইয়া পড়িলাম। কতক্ষণ ঘুমাইয়াছিলাম জানি না, কিন্তু হঠাৎ মনে হইল বুঝি স্বপ্নে গান শুনিতেছি। একবার ভাবলাম, রাত্রের ব্যাপার হয়ত এখনো সমাপ্ত হয় নাই, আবার মনে হইল প্ৰত্যুষের মঙ্গল-আরতি বুঝি সুরু হইয়াছে, কিন্তু কাসর-ঘন্টার সুপরিচিত দুঃসহ নিনাদ নাই। অসম্পূর্ণ অপরিতৃপ্ত নিদ্ৰা ভাঙ্গিয়াও ভাঙ্গে না, চোখ মেলিয়া চাহিতেও পারি না, কিন্তু কানো গেল ভোরের সুরে মধুর কণ্ঠের আদরের অনুচ্চ আহবান-এঁরাই জাগো, রাই জাগো, শুক