পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় অধ্যায় : বিবিধ বংশের উল্লেখ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৫৫ ছোটলিখার ব্রাহ্মণ বংশ ভরদ্বাজ গোত্র ছোটলিখার ভরদ্বাজ গোত্রীয় ব্রাহ্মণ বংশের আদিপুরুষ ঢাকাদক্ষিণ হইতে এই স্থানে আগমন করেন। এই স্থানের নাম পূৰ্ব্বে “লিখা” ছিল,১৮ পরে বড়লিখা ও ছোটলিখা এই দুই অংশে বিভক্ত হয়। ভরদ্বাজ গোত্রীয় ভবদেব ভট্টাচাৰ্য্য কৃতী পুরুষ ছিলেন, কিন্তু তাহার আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না, তজ্জন্য নিজ ভরণ পোষণের জন্য শ্রীহট্টের নবাব সরকারে আবেদন করিলে, তদানীন্তন নবাব হরকিষুণ দাস মনসুর উলমুল্ক বাহাদুর এক সনন্দে (নং ৬৩৭) তাঁহাকে পাথারিয়া হইতে ॥১৪৯ ভূমি ব্ৰহ্মত্র দেন। নবাব নজীব আলী খা বাহাদুর ও নবাব এক্রামউল্লা খা বাহাদুর হইতে পরবর্তী কালে দুই বিভিন্ন সনন্দে (নং যথাক্রমে ৫৩৯ এবং ৬৩৮) পঞ্চখণ্ড হইতে ১৭৮ এবং ছোটলিখা ও ইছামতী হইতে৯]L¢মি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন। ১১৯৫ সালে তাহার মৃত্যু হইলে তদীয় ভ্রাতা গিরিধর ভট্টাচাৰ্য্য তাহা “তছরূপ" করেন। ভবদেবের পুত্রের নাম জয়রাম, তৎপুত্র বৈদ্যনাথ, তাহার পুত্র কুলচন্দ্র, তৎপুত্র কালীচন্দ্র, ইহার পুত্র শ্ৰীযুত নবীনচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য হইতে এই ক্ষুদ্র বিবরণী প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। এই বংশের একশাখা পাথারিয়া বাসী । ভট্টাচাৰ্য্য গৌড় বংশ ছোটলিখার নিশাপতি গৌড় বংশীয় ব্রাহ্মণেরাও সমাজে সম্মানিত । ইহারা “ভট্টাচাৰ্য্য গৌড়" বংশ বলিয়া অভিহিত । বংশ প্ৰবৰ্ত্তকের নাম নিশাপতি ছিল। এই বংশে অনেক পণ্ডিত ছিলেন, তন্মধ্যে হরিহর বিদ্যাবাগীশ, তৎপুত্র রঘুনাথ তর্কবাগীশ, তাহার পুত্র গৌরীকান্ত বাচস্পতির নাম উল্লেখযোগ্য । কথিত আছে, গৌরীকান্ত প্রথমতঃ বিদ্যায় বঞ্চিত ছিলেন, লোকে তজ্জন্য তাহাকে অশ্রদ্ধা ও অনাদর করিত। একদা আত্ম-ধিকৃত হইয়া তিনি পার্শ্ববৰ্ত্ত অরণ্যে গমন করেন। কিছুদূর গেলেই অরণ্যাশ্রয়ী এক সন্ন্যাসীর সহ তাহার সাক্ষাৎ হয়। সন্ন্যাসী নানা বিষয়ে তাহাকে হয়; সন্ন্যাসী তাহাকে আশ্বাস প্রদান পূৰ্ব্বক গৃহ-প্রত্যাগমনের আদেশ করেন। গৌরীকান্ত যেন পুনজীবন লাভ করিলেন। লোকেও তাহার ভাবপরিবর্তন লক্ষ্য করিয়া, অপ্রত্যাশিত রূপে মান্য ও শ্রদ্ধা করিতে লাগিল। তাহার জ্ঞান-গৌরবে অচিরেই তিনি বাচস্পতি উপাধি লাভ করিলেন। তাহার মুখবিগলিত জ্ঞানাৰিত বাক্য শ্রবণে শ্রোতা বিমুগ্ধ হইয়া যাইত, তত্ৰত্য রামেশ্বর চৌধুরী তাহার উপর বিশেষ শ্রদ্ধাবান হইয়া উঠিলেন এবং তদীয় শিষ্যত্ব স্বীকার করিলেন। ইহার পুত্ৰ মধুসূদন পঞ্চানন দেশে বিশেষ সম্মান অৰ্জ্জন করেন। তাহার পর চারিপুরুষ মধ্যে এ বংশে আর কেহই উপাধি অৰ্জ্জন করিতে পারেন নাই। কিন্তু বাচস্পতি হইতে “সিদ্ধবংশ" বলিয়া সৰ্ব্বসাধারণ এ বংশীয়দিগকে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করিয়া থাকে। আগিয়ারামের চৌধুরী বংশ কবিমগঞ্জ সবডিভিশনের ভিন্ন ভিন্ন পরগণা ও গ্রামে আরও বহুতর প্রসিদ্ধ ব্ৰাহ্মণ বংশের বাস আছে, সে সকল বংশ বিবরণ যে আমরা প্রাপ্ত হই নাই, তাহা বলা বাহুল্য। আগিয়ারাম পরগণার ১৮. মকুন্দরাম সিদ্ধান্ত নামক এক মহাত্মা কৃত এক প্রাচীন শ্লোকেও এই স্থানের নাম শুধু "লিখা" বলিয়া লিখিত হইযাছে।