পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড সৰ্ব্বেশ্বর নামে তাহার এক জ্ঞাতি ভ্রাতা ছিলেন, তাহারও একটি বয়স্থা কন্যা ছিল; সাতগায়ের দত্ত বংশীয় নারায়ণ দত্ত নামক এক ব্যক্তিকে আনয়ন করিয়া তাহার সহিত উক্ত কন্যার বিবাহ দেন। এই বংশীয়গণ এক্ষণে “দত্ত পুরকায়স্থ" বলিয়া খ্যাত। পুরুষরামের প্রতিজ্ঞা রামেশ্বরের পুরুষরাম, গোবিন্দরাম ও জয়দেব নামে তিন পুত্র হয়। জ্যেষ্ঠ পুরুষরাম পবিত্ৰচেতা ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ লোক ছিলেন। এক বৎসর খেদা করিতে জঙ্গলে গিয়া খাদ্যের সহিত করেন যে আর খেদা করিতে বনে যাইবেন না এবং নবাব সরকারে হাতী দিবেন না। কাজেই আর সে বৎসর হাতী দেওয়া হইল না। খেদা মহালের জন্য নিরূপিত হাতী প্রদান না করার অপরাধে তিনি তখন ঢাকায় নীত হইলেন। ঢাকার নবাব সমক্ষেও, হাতী দিতে পারিবেন না, এই উত্তর দেওয়ায় নবাব ক্রুদ্ধ হইলেন এবং হস্তীপদতলে তাহাকে নিক্ষিপ্ত করিবার আদেশ দিলেন। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ পুরুষরামে অটল রহিলেন। সকলেই তাহাকে উপদেশ দিল—“এখনও অবসর আছে, এখনও ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া হাতী দিতে স্বীকৃত হউন; বৃথা প্রাণ বিসৰ্জ্জন করবেন না।” হইলেন না। দণ্ডাদেশ প্রতিপালিত হইল; পুরুষরামের দেহ হস্তীপদতলে নিষ্পিষ্ট হইল! হায় স্পৰ্দ্ধা, সৰ্ব্বত্র তোমার যোগ্য মূল্য নাই। পুরুষরামের স্পৰ্দ্ধা তাহার মৃত্যুর কারণ হইল; আর নবাব নিজ স্পৰ্দ্ধারক্ষার্থ পুরুষরামের স্পৰ্দ্ধাকে পদদলিত করিলেন। রামেশ্বর আদিত্র তৎকালে জীবিত ছিলেন, পুত্রের ঈদৃশ মৃত্যু বাৰ্ত্তা প্রাপ্তে অত্যন্ত শোকাকুলিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। পুরুষরামের গঙ্গাপ্রসাদ ও বৈদ্যনাথ নামে দুই পুত্র ছিল। তন্মধ্যে বৈদ্যনাথ পিতার মৃত্যুকালে মাতৃগর্ভে ছিলেন। পুরুষরামের মধ্যম ভ্রাতা গোবিন্দ রামেরও দুই পুত্র কালিকা প্রসাদ ও আদিত্যরাম, এবং কনিষ্ঠ জয়দেবের জগন্নাথ নামে একপুত্র ছিল, ইহাদের কেহ কেহ দশসনা বন্দোবস্তের সময় জীবিত ছিলেন । গঙ্গাপ্রসাদ ও বৈদ্যনাথের নামে পরে তত্ৰত্য ১নং ও ৩নং তালুক এবং কালিকা প্রসাদের নামে ২নং তালুকের বন্দোবস্ত হয়। কালিকা প্রসাদের প্রতিজ্ঞা পালন পুরুষরামের শোকে বৃদ্ধ রামেশ্বর যখন পরিতপ্ত হইতেন, তাহার শিশু পৌত্র কালিকা প্রসাদ কোলে বসিয়া অনুতপ্ত হইত। শিশু পিতামহকে ক্ৰন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা করিত এবং বৃদ্ধের মুখে পুরুষরামের প্রতিজ্ঞার কথা একাগ্রমনে অশ্রুপূর্ণ লোচনে শ্রবণ করিত। ইহাতে শিশু কালাবধিই নবাব নামের প্রতি তাহার ঘৃণার উদয় হয়। তিনি যখন প্রাপ্ত বয়স্ক, তখন ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আধিপত্য দেশে প্রতিষ্ঠিত হইলেও, শাসনভার নবাবের হাতে রহিয়াছিল। সংসারের ভার যখন কালিকা প্রসাদের উপর পড়িল, তখন রীতিমত হাতী দিয়া সেই নবাবের তুষ্টি সাধনে তাহার প্রবৃত্তি হইল না, তিনিও পুরুষরামের ন্যায় হাতী দিতে অস্বীকৃত হইলেন। তরুণ বয়স্ক কালিকা প্রসাদও নবাবের আদেশে ঢাকায় নীত হইলেন। পরিবারবর্গ কান্দিয়া অস্থির হইল; তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা আদিত্যরাম প্রভৃতি সঙ্গে চলিলেন; কৰ্ম্মচারী ও হিতৈষী বন্ধুবান্ধবও সঙ্গ ত্যাগ করিল না। ঢাকাতে উপস্থিত হইলে, তাহার প্রতি কঠোর দণ্ডাদেশ হইল, কিন্তু তিনি ভীত হইলেন না;