পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড শ্ৰীপতিখা শ্রীপুরের স্থপয়িতা। শ্রীপতির পুত্র চন্দ্রপতিখা চাদরায় নামে পরিচিত ছিলেন; তিনি নিজ জনক জননীর মুক্তি কামনায় বাড়ীর সম্মুখে এক শিব প্রতিষ্ঠা করেন, ঐ শিব অদ্যাপি “সতীকুণ্ড"-চাদ রায়ের তিনপুত্র, তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ রামনাথ রায়ের পত্নী, পতির মৃত্যুর পর তাহার চিতাগ্নিতে আত্মদেহ আহুতি প্রদান করেন; সেই পবিত্র চিতা "সতীকুণ্ড" নামে কথিত হইয়া থাকে। এই বংশের আরও দুইটি সতীর সহমরণ গমনের চিহ্ন স্বরূপ সতীকুণ্ড বিদ্যমান আছে, তন্মধ্যে রাম রায়ের কনিষ্ঠ ভ্রাতা রামগোপালের পৌত্র হরিশ্চন্দ্রের স্ত্রী একজন; অপরা রাম রায়ের কনিষ্ঠ ভ্রাতা আনন্দ রায়ের পৌত্র রাজীব রায়ের স্ত্রী। রামগোপালের নামে একটা দীর্ঘিকা আছে। রাম রায়ের পৌত্র রামেশ্বর "জনাবদার" খ্যাতি বিশিষ্ট ছিলেন। এ বংশীয় রামকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর নামে তত্ৰতা ৪নং তালুকের এবং শ্যামরায় বংশীয় রামকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর নামে ১নং তালুকের বন্দোবস্ত হইয়াছিল। রামনাথের অধস্তন ৭ম পুরুষ শ্রীযুক্ত কৃষ্ণ কিশোর রায় চৌধুরী হইতে আমরা এই বংশ বিবরণ প্রাপ্ত হইয়াছি। টিকরার শাখা বং রাম নারায়ণের পুত্র প্রভাকর বা রামচন্দ্র খা টিকরা গ্রামে গমন করিয়া ছিলেন বলা গিয়াছে, রামচন্দ্র খার জ্যেষ্ঠপুত্র হরিহর খার পুত্রের নাম লক্ষ্মীনাথ খা.১২ তঃপুত্র জিতামিত্র (ওরফে বসন্তরায়), তাহার পুত্র জানকী নাথ (অনন্ত রায়), তৎপুত্র রামেশ্বর (খ্যাত কামদেব); ইহার ছয়পুত্র, তন্মধ্যে ২য় ও ৪র্থ পুত্র বংশ রক্ষক ছিলেন । দ্বিতীয় পুত্র মাধব রায়ের এক মাত্র পুত্র জয়রাম রায় চৌধুরীর নামে খ্যাত তত্ৰত্য ১নং তালুকের বন্দোবস্ত হয়, ইহার একমাত্র পুত্র সদানন্দের পুত্রাদি হয় নাই । কামদেবের ৩য় পুত্র রঘুরামের (খ্যাত রাঘব রাম) চারিজন পুত্র ছিলেন, তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ রাজীবরাম খ্যাতনামা ব্যক্তি । তিনি নবাব হরকিযুণ মনসুর উল মুলক হইতে জনাবদার উপাধি সহ উক্ত পরগণার (সনন্দ নং ১৮৫) কতক ভূমি (পরিমাণ—১৩॥০ ৫॥০) দেবত্র প্রাপ্ত হন। ১১৭৮ সালে তাহার মৃত্যু হইলে উক্তভূমি তৎপুত্র গোবিন্দরাম জনাবদারের তছরূপ থাকে। এই গোবিন্দ রামও যে খ্যাতনামা ব্যক্তি ছিলেন, তাহার জনাবদার উপাধি হইতেই তাহা বুঝা যায়। রাজীব রায়ের তৃতীয় সহোদয় রামকান্ত এবং উক্ত গোবিন্দ রায়ের যুক্ত নামে দশসনা বন্দোবস্ত করেন । তত্ৰত্য ২নং “কান্ত গোবিন্দ" তালুকের উৎপত্তি হইয়াছিল। রাজীব রায়ের পাচ পুত্র ছিলেন, তন্মধ্যে পূৰ্ব্বোক্ত গোবিন্দরাম জনাবদার সৰ্ব্ব জ্যেষ্ঠ এবং “জগমোহন” ৪র্থ ছিলেন । জগমোহনের মাধ্যমে পুত্রের নাম বৈদনাথ (কামদেব), তৎপুত্র কবি রাধা নাথ । পদ্মাপুরাণ প্রণেতা রাধানাথ রাধানাথ শৈশবে পিতৃহীন হইয়াছিলেন, তাহার শিক্ষা সংস্কৃত চতুষ্পাঠীর সীমা অতিক্রম করে নাই। তিনি চরিত্রবান পুরুষ ও গ্রামের অগ্রণী স্বরূপ ছিলেন। তিনি একখানা “পদ্মাপুরাণ” সুলিখিত ১১. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৩য় ভাগ ঠ পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য। বিভাপতি খার পরবর্তদেরও খা উপাধি ধারণ বোধ হয় আত্মকৃত। যেমন চৌধুরীর পুত্র চৌধুরী, মজুমদারের পুত্র মজুমদার উপাধি গ্রহণ করেন, তদ্রুপ। ১২. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩য় ভাগ ঠ পরিশিষ্ট দ্রষ্টব্য। পরবর্তী বংশীয়গণের খা উপাধি ধারণ বোধ হয় আত্মকৃত। যেমন সাধারণতঃ চৌধুরীর পুত্র চৌধুৰী, মজুমদারের পুত্র মজুমদার উপাধি গ্রহণ করেন, তদ্রুপ।