পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ অধ্যায় পুনঃ বিবিধ বংশ কথা পরগণা-জলসুখা বসু বংশ “জলসুখা পরগণার অন্তর্নিবিষ্ট নগর একটি ক্ষুদ্র (কিন্তু বহু প্রাচীন) পল্লী গ্রাম। আজ প্রায় দেড়শত বৎসর হইল, এই গ্রামে রাখাল বসু নামক একব্যক্তি অবস্থান করিতেন। ইহার গোত্র কৃষ্ণাত্রেয়। কিন্তু জানিনা কি প্রকারে ইনি বসু বলিয়া আপনার কৌলিক উপাধি গ্রহণ করেন। শ্রীহট্টে ঘোষ-বসু-গুহ-মিত্র এইরূপ খ্যাতি ছিল না। বৰ্ত্তমানে যে সকল পরিবারে ইহা দেখা যায়, উহাদের পূৰ্ব্বপুরুষেরা হয় ঢাকা প্রভৃতি অঞ্চল হইতে সমাগত, নয় কোনও অজ্ঞাত কারণে প্রাগুক্ত উপাধি গ্রহণ করিয়াছেন। রাখাল বসু শেষোক্ত শ্রেণীর ছিলেন বলিয়াই বোধ হয়, কেননা বঙ্গীয় প্রসিদ্ধ কায়স্থ মহাশয়দের গোত্র কৃষ্ণাত্রেয় নহে, গৌতম।” “রাখাল বসুর দুইপুত্র ছিলেন, প্রথম শ্যাম বসু, দ্বিতীয় নেহাল বসু। শ্যাম বসু নগর পরিত্যাগ করিয়া প্রথমতঃ ময়মনসিংহের পূৰ্ব্ব প্রান্তস্থিত অপর একটি ক্ষুদ্র পল্লী গ্রামে যাইয়া অবস্থান করেন, এই গ্রামের নাম জয়সিদ্ধি । নগর হইতে এই গ্রামটির দূরত্ব ৭/৮ মাইল আন্দাজ হইবে। রাখাল বসুর দ্বিতীয় পুত্র নেহাল বসু নগরেই থাকেন। কিন্তু ত:হার পুত্র নরহরি শ্রীহট্টের দক্ষিণ প্রান্তস্থিত বেজোড়া পরগণায় পাটলি গ্রামে গিয়া বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হইয়া অবস্থিতি করেন । তদীয় বংশধর শ্রীযুক্ত কৈলাসচন্দ্র বসু অদ্যাপি সেই গ্রামেই বসতি করিতেছেন।” জয়সিদ্ধি উপনিবিষ্ট শ্যামবসুর কথা এস্থলে প্রাসঙ্গিক ভাবে বলা অন্যায় হইবে না। তাহার “তিন পুত্র; জ্যেষ্ঠ কমললোচন, মধ্য পদ্মলোচন এবং কনিষ্ঠ কালীচরণ। পদ্মলোচন বসু সময়োপযোগী লেখাপড়া শিক্ষা করিয়া ময়মনসিংহ দেওয়ানী আদালতে একটি চাকরী লাভ করিলেন ।” ইতিপূৰ্ব্বে বেজোড়ার নদীবংশের কথা বলা গিয়াছে, “আন্ধিউড়া গ্রামে নদী মজুমদারের যে শাখা আছে, সেই শাখায় উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে যুগল কিশোর নদী মজুমদর একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি বৰ্ত্তমান ছিলেন । হরনাথ নামে তাহার একটি পুত্র এবং উমাকিশোরী নামী তাহার একটি রূপলাবণ্য শালিনী সৌভাগ্যবতী কন্যা জন্মে।” “জয় সিদ্ধির কমললোচন বসু তদীয় মধ্য ভ্রাতা পদ্মলোচনের বিবাহের জন্য যুগল কিশোর নদী মজুমদারের শরণাপন্ন হইলেন ;" “-যথাকালে বিবাহকাৰ্য্য সম্পন্ন হইয়া গেল। কথিত আছে কন্যাটিকে স্বামীর আলয়ে পাঠাইবার সময়ে সাধু যুগলকিশোর সমেহে আশীৰ্ব্বাদ করিয়া বলিয়াছিলেন-মা পাত্ৰ দেখিয়া দিলাম, নৃত্য করিয়া খাও।” “শুভক্ষণে সৌভাগ্যবতী উমকিশোরী পতিগৃহে প্রবেশ করিলেন।” “কেবল যে ধনসম্পত্তিতেই পদ্মলোচনের সংসার শোভিত হইল, তাহা নহে। একে একে তিনটি পুত্র সন্তান হরমোহন, আনন্দমোহন ও মোহিনীমোহন-প্রত্যেকটি যেন মহেন্দ্রক্ষণে জন্ম পরিগ্রহ করিয়া কেবল যে পিতামাতার আনন্দবৰ্দ্ধন করিল এমন নহে, তাহারা কালে পণ্ডিত ও চরিত্রে যশ্বম্বী হইয়া স্বীয় জন্মভূমির মুখও উজ্জ্বল করিয়া গিয়াছে।" উমাকিশোরীর মধ্য পুত্রই "ভারতনক্ষত্র” সুবিখ্যাত আনন্দমোহন বসু। তাহাতে মাতুল “হরনাথ মজুমদারের আকৃতির এত