পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্রাহ্মণ বিভাগ প্রথম অধ্যায় ব্রাহ্মণ বংশ বৃত্তান্ত নামতত্ব সুনামগঞ্জ সবডিভিশন উত্তর শ্রীহট্টের ঠিক পশ্চিমে ও হবিগঞ্জ সবডিভিশনের উত্তরে অবস্থিত; ইহার উত্তরে জয়ন্তিয়া পাহাড় এবং পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা। সুনামগঞ্জ সবডিভিশনে জলাভূমি ও বিস্তৃত হাওরের বাহুল্য লক্ষিত হয়। এই স্থানে প্রচুর পরিমাণে মৎস ধৃত ও হয় ও তাহা শুষ্ক করিয়া ব্যবসায়িগণ ভিন্ন ভিন্ন স্থানে প্রেরণ করে। সুনামগঞ্জ হইতে প্রচুর পরিমাণে ঘৃত রপ্তানি হইয়া থাকে। সুনামগঞ্জ বাজারের নামটি এইরূপ জনৈক ব্যবসায়ী কর্তৃক প্রদত্ত হয় বলিয়া শুনা যায়। এই বাজারের নামানুসারেই ১৮৭৭ খৃষ্টাব্দে শ্রীহট্ট জেলায় সুনামগঞ্জ সাবডিভিশন স্থাপিত হয়। সুনামগঞ্জে প্রায় ৩২টি পরগণা আছে, তন্মধ্যে আতুয়াজান, জাতুয়া, বাণিয়াচঙ্গ (জোয়ার) প্রভৃতিই অপেক্ষাকৃত প্রাচীন, এবং এ গুলির নামও কোন কোন ব্যবসায়ী সংসৃষ্ট। কথিত আছে যে, পূৰ্ব্বকালে এই জলময় স্থানে আতুয়া, জাতুয়া ও পাগল নামে চঙ্গ জাতীয় তিন ব্যক্তি মৎস্য শিকারের জন্য আসিয়া, মৎসের প্রাচুর্য দৃষ্টে এই স্থানেই বাস করে; সেই বিরল-বসতি স্থানে ইহারা মৎস্য ধৃত করার জন্য পরস্পরে এক এক সীমা নির্দেশ করিয়া লইয়াছিল; একের চিহ্নিত সীমার ভিতরে অন্যে মৎস্য ধৃত করিত না। এই স্থান গুলিই পরে তাহাদের নামে খ্যাত হয় ও পশ্চাৎ এক একটি পরগণায় পরিণত হয়। এই জনশ্রুতির মূলে কতদূর সত্য নিহিত আছে বলা যায় না। আতুয়াজান পরগণার জগন্নাথপুর একটি প্রাচীন স্থান । যখন লাউড়রাজ্যের সিংহাসনে রাজা বিজয় সিংহ অধিষ্ঠিত ছিলেন, সেই সময় হইতেই এই স্থানে রাঢ়অঞ্চল হইতে ভিন্ন ভিন্ন বংশীয় ব্রাহ্মণবর্গের আগমন ঘটে । জগন্নাথ বিপ্রের নামানুসারে জগন্নাথপুরের নাম হয়, ইহা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে যথাস্থানে বলা গিয়াছে। শিক সোণাইতার ভট্টাচাৰ্য্য বংশ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে ২য় ভাগ ৩য় খণ্ড ২য় অধ্যায়ে আমরা ভরদ্বাজ গোত্রীয় রাঘব ভট্টাচার্য্যের উল্লেখ করিয়াছি। রাঘব ভট্টাচার্য্যের বংশোদ্ভব শ্ৰীযুত রাম কিশোর চৌধুরী ও শ্রীযুত রমেশচন্দ্র চৌধুরী আমাদিগকে জানাইয়াছেন যে রাঘব ভট্টাচাৰ্য্য রাঢ় দেশ হইতে এদেশে আসেন; তিনি আগমন করিলে তদীয় গুণ গ্রামে মুগ্ধ হইয়া রাজা বিজয় সিংহ তাহার নিকট হইতে দীক্ষা মন্ত্র গ্রহণ করেন ও প্রচুর ভূসম্পত্তি দান করিয়া জগন্নাথপুরের সংলগ্ন রায়পুর নামক স্থান তাহার বাসের জন্য নির্দেশ করিয়া দেন। এই স্থানে কিছুদিন বাস করিয়া তিনি শ্রীহট্টে বৈদিক বিপ্রবর্গের বিশেষ প্রভাব প্রতিপত্তি লক্ষ্য করেন। তাহার পর কিছু দিনের জন্য তিনি কাশীধামে সামবেদের স্থলে যজুৰ্ব্বেদীয় বলিয়া গণ্য হন। শ্রীহট্টের বৈদিক ব্রাহ্মণবর্গের সহিত সম্মিলিত হইবার জন্যেই তিনি ইহা করিয়াছিলেন এবং তজ্জন্য "বেদোদ্ধারী রাঘব” নামে খ্যাত হন।