পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-পঞ্চম খণ্ড ডাঙ্গায় উঠাইয়া ফেলেন। কৰ্ম্মচারীটি শ্রীরামের এই দুঃসাহস ও বীরত্বে অতিশয় সন্তুষ্ট হন; ঔদ্ধত্য প্রকাশ করার জন্য তৎপ্রতি তিনি কিছুমাত্র বিরক্ত হন নাই। শ্রীরামের তিন পুত্র, ইহারা দশসনা বন্দোবস্তের সময় বৰ্ত্তমান ছিলেন, তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ বিনোদরায় অতি বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন, তিনি বিষয়ের তত্ত্বাবধান করিতেন, তিনি পিতামহ ও পিতার নামে ১নং ও ২নং তালুকের বন্দোবস্ত গ্রহণ করিয়া, ৩নং তালুকটি নিজের নামে বন্দোবস্ত লন। তাহার ভ্রাতুষ্পপুত্র রামগোপাল তখন অতি শিশু ছিলেন; এই শিশুর অদ্ভুত স্মৃতিশক্তির পরিচয় পাইয়া সকলেই বিক্ষিত হইত, বিনোদ এই শিশুকে প্রাণের সহিত ভাল বাসিতেন, ৪নং তালুকটি ইহারই নামে তিনি বন্দোবস্ত করাইয়াছিলেন; কিন্তু শিশুটি পিতা, জ্যেষ্ঠতাত ও খুল্লতাত প্রভৃতিকে শোকসাগরে ভাসাইয়া অচিরেই চিরতরে চলিয়া যায়। ৪নং তালুকটি সেই শিশুর নাম চিরস্থায়ী করিয়া রাখিয়াছে। হালাবাদি বন্দোবস্তের সময়েও এ বংশীয় অনেক ব্যক্তি নিজ নামে তালুক বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন। রতি বল্লভের পুত্র রামকৃষ্ণ কৃষ্ণভক্তি পরায়ণ ও দৈবশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন, তাহার গুণে বহুলোক আকৃষ্ট হয় ও তদীয় শিষ্যত্ব স্বীকার করে। তাহার পুত্ৰগণ “গোস্বামী” খ্যাতি ধারণ করিয়াছিলেন। রাঘবানন্দের বংশে তারানাথ, সৰ্ব্বানন্দ, বিশ্বম্ভর প্রভৃতি আধুনিক অনেক ব্যক্তিই সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন; “গোবিন্দ কীৰ্ত্তন”, “সংকীৰ্ত্তন”, “শিবের আরতি” ও “মালসী গীত" প্রভৃতি তাহদের রচিত অনেক সঙ্গীত আছে। পূৰ্ব্বে যে সাচারামের উল্লেখ করা হইয়াছে, দাস জাতীয় সেই সাচারামের বংশধরবর্গও অদ্যাপি উক্ত গ্রামবাসী । আচাৰ্য্য বংশ শিক সোণাইতাবাসী ভরদ্বাজ গোত্রীয় আচাৰ্য বংশের কথা এস্থলে আলোচ্য। এ বংশেরও আদিস্থান রাঢ় দেশ। আচাৰ্য্য বংশীয় শ্ৰীযুত রামদুলাল আচার্য্যের উদ্যোগে আমরা যে বংশ তালিকা ও বিবরণী প্রাপ্ত হইয়াছি, তাহাতে লিখিত আছে,-জীবনকৃষ্ণ নামক এক ব্যক্তি কামরূপ গমন করিয়াছিলেন; সেই স্থানে বাৎস্য গোত্রীয় নটবর নামে কে দ্বিজতনয়ের সহিত তাহার পরিচয় ও প্রণয় জন্মে। কামরূপ হইতে উভয়ে একত্র প্রত্যাগমন কালে নটবরের অনুরোধে জীবনকৃষ্ণ নটবরের বাড়ীতে (জগন্নাথপুরে) আগমন করিয়া আভিথ্য গ্রহণ করেন। এই স্থানে কিছু দিন বাস করিলে, নটবরের বিবাহ-যোগ্যা সুন্দরী ভগিনীকে তিনি বিবাহ করেন; ও পার্শ্ববৰ্ত্তী রায়পুর গ্রামে গিয়া বাটী নিৰ্ম্মণপূৰ্ব্বক সন্ত্রীক বাস করেন। পূৰ্ব্বোক্ত বংশ তালিকা ও বিবরণী অনুসারে জীবনকৃষ্ণের লোকনাথ ও রঘুনাথ নামে দুই পুত্র হয়, তন্মধ্যে রঘুনাথের (দুই পুত্রত এবং) এক কন্যা জন্মে। এই কন্যাকে রাজা বিজয় সিংহের পিতা রাজসিংহ বিবাহ করিয়াছিলেন বলিয়া লিখিত আছে। শিক সোণাইতার আচাৰ্য্য বংশীয়গণ৪ লোকনাথের পুত্র কৃষ্ণদাস আচাৰ্য্যরত্বের সন্তান। ইহারা শিবপুর (প্রকাশিত সাচায়ানী গ্রাম বাসী)। ত_আচাৰ্য্য বংশ তালিকা মতে ইহাদের নাম কৃষ্ণানন্দ ও রাঘবানন্দ (রাঘব ভট্টাচাৰ্য্য) ; পাঠক ইতিপূৰ্ব্বে রাজগুরু রাঘবের বংশবিবরণে পাঠ করিয়াছেন যে তিনি রাঢ়দেশ হইতে আগমন করেন, রাঘবের বর্তমান বংশীয়গণ ইহাই জানেন। তাঁহাদের মতে রাঘবের সহিত কৃষ্ণানদের সম্পৃক্ত সংস্থাপন স্বার্থপরতা মূলক সুতরাং কৃত্রিম। তবে আমাদের প্রাপ্ত আচার্য বংশ তালিকাতে যখন কৃষ্ণানদের রাঘবানদেব রাঘবানন্দ নামে এক ভ্রাতা থাকা দৃষ্ট হইতেছে, তখন বলিতে হইবে যে কৃষ্ণানদের রাঘব নামে প্রকৃতই এক ভ্রাতা ছিলেন এবং তাহাতেই তিনি রাঘবের ভাই বলিয়া পরিচয় দিয়াছিলেন; কিন্তু এই রাঘব ও বিষ্ণু দাসাদির পিতা রাজগুরু রাঘব ভিন্ন ব্যক্তি। পরন্তু পূৰ্ব্বোক্ত আখানোক্ত কৃষ্ণান্দ ও আচাৰ্য বংশীয় এই কৃষ্ণানন্দ বিভিন্ন ব্যক্তি কি না, তাহাও বিবেচ্য। ৪. পরবর্তী পরিশিষ্টে আচাৰ্য্যবংশ তালিকা প্রদত্ত হইবে।