পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ হরিদাসাদির সহিত ক্ৰন্দন করিতেন।১৯ লোকের পাপশক্তি দৃষ্টে যাহাদের অন্তরে দাহ উপস্থিত হয়, নয়নে জল ঝরিতে থাকে, তাহাদের দুঃখ দূর করা লোকের সুসাধ্য নহে। অদ্বৈত নিরুপায় হইয়া ভাবিলেন যে, লোকের আন্তরিক অশান্তি, লোকের দুর্গতি ভগবৎ শক্তি ব্যতীত দূর করিবার ক্ষমতা কাহারই নাই। কিন্তু ভগবান তাহার প্রার্থনা শুনিবেন কেন? একদা শাস্ত্রান্বেষণে তিনি একটি শ্লোক দেখিতে পাইলেন, শ্লোকটির মৰ্ম্ম এই, যে কেহ তুলসীমঞ্জরী ভক্তিভরে হরিচরণে সমর্পণ করেন, ভগবান তাহার সঙ্কল্প পূরণ করিয়া থাকেন। শাস্ত্র বাক্য বিশ্বাস করিয়া তিনি এই সঙ্কল্প আবির্ভূত হইয়া সমস্ত পতিত জনের উদ্ধার করেন ॥২০ একটি নিভৃত স্থানে উপবেশন পূৰ্ব্বক নিয়ত নিয়মিত রূপে কিছুদিন সেবা করিলে, সহসা তাহার চিত্ত প্রফুল্ল হইয়া উঠিল, তিনি শান্তিপুর হইতে নবদ্বীপে আগমন করিলেন ও তথায় সাময়িক ভাবে বাস করিতে লাগিলেন। অদ্বৈত নবদ্বীপে অদ্বৈতের এই যে জীব দুঃখ কাতরতা এবং জীব-দুঃখ দূর করিবার জন্য দুৰ্জ্জয় তপস্যা, ইহা দুৰ্ল্লভ পদার্থ। নিজের মুক্তি কামনায় অনেকেই তপস্যা করেন কিন্তু পরের মুক্তির তরে তপশ্চাৰ্য্যা দুৰ্ল্লভ। অদ্বৈতের বিশ্বাসও দুৰ্ল্লভ, আর তাহার সফলতাও অসামান্য । নবদ্বীপ আসিয়া অদ্বৈত নিজ গৃহে গীতা ও ভগবতের ভক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। দুই একজন করিয়া নাগরিক তাহার ব্যাখ্যা শুনিতে আসিতেন। এইরূপে নবদ্বীপে একটি আদিবৈষ্ণব সভার প্রতিষ্ঠা হয়। এই সভায় নবদ্বীপ-প্রবাসী শ্রীহট্টের শ্রীবাস, শ্রীরাম, শ্রীপতি, শ্রীনিধি, চন্দ্রশেখর, মুরারিগুপ্ত, জগদীশ প্রভৃতি একত্রিত হইতেন। শ্রীহট্টের জগন্নাথ মিশ্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র বিশ্বরূপও আসিতেন ও অদ্বৈতের ব্যাখ্যান শুনিয়া তৃপ্তিলাভ করিতেন।২১ অদ্বৈতের এই কাণ্ড দর্শনে পণ্ডিতবর্গ অবজ্ঞার হাসি হাসিতেন, কিন্তু অদ্বৈতের নিষ্ঠা ও বিশ্বাস, তদীয় বাক্যের দৃঢ়তা ও জীবনের লক্ষ্য বিচার করিয়া তাহারা বিক্ষিত হইয়া যাইতেন। যাহা হউক, নবদ্বীপে অদ্বৈতের অনুরাগীর দল ক্রমশঃই বৰ্দ্ধিত হইয়া উঠিয়াছিল। যে বিশাল ভক্তি-প্রবাহে একদিন শান্তিপুর ডুবুডুবু হইয়াছিল, নবদ্বীপ ভাসিয়া গিয়াছিল, যে স্রোত গৌড় বঙ্গ আপ্লাবিত করিয়া সাগর তীরে পৌছিয়াছিল, তাহার উৎপত্তি ভূমি এই অদ্বৈত সভা বলা যাইতে পার। অদ্বৈতের আরাধনার ফল তাহার নবদ্বীপ আগমনের কিছু কাল পরেই তিনি প্রাপ্ত হন; তাহার বৈষ্ণব সভা সংস্থাপনের—তাহার গীতা ও ভাগবত বিচারের ফল কিছুকাল পরেই তিনি প্রাপ্ত হন। জগন্নাথ মিশ্রের দ্বিতীয় পুত্র বিশ্বম্ভর মিশ্র-যিনি শ্ৰীমহাপ্ৰভু অথবা শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্য নামে পশ্চাৎ প্যাত হন, তাহার আবির্ভাবেই অদ্বৈতের মনোরথ পূর্ণ হয়। উপসংহারে আমরা তাহার অমৃত-বষী লীলাকথা প্রকীৰ্ত্তনে লেখনী পবিত্র করিব। নানা দিন্দেশ হইতে স্রোতস্বতী সমূহ দ্রুতগতি ধাবিত হইয়া সরিৎপতিসঙ্গমে যেমন আত্মচরিতার্থতা লাভ করে, বিভিন্ন স্থান হইতে ভক্তবর্গ আগমন পূৰ্ব্বক তদ্রুপ শ্ৰীমহা প্রভুর সহিত সম্মিলিত হইয়া নবদ্বীপধামকে ভক্তিতরঙ্গে ডুবাইয়া দিয়া ছিলেন, অদ্বৈত ইহাদের মধ্যে ১৯. “অদ্বৈত আচাৰ্য্য আদি যত ভক্তগণ। জীবের কুমতি দেখি করয়ে ক্ৰন্দন৷”-চৈতন্য ভাগবত । ২০. অদ্বৈতের আরাধনা স্থানে সম্প্রতি একটি দেবালয় স্থাপিত হইয়াছে। ২১. ইহার কাহিনী পশ্চাৎ উল্লেখ করা যাইবে ।