পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ চলিয়া গিয়াছিলেন। তদবস্থায় ৮৪ বৎসর বয়সে ১২৭৭ বাং কাৰ্ত্তিক মাসে এক একাদশী তিথিতে তিনি সকলকে ডাকিয়া বলিলেন—“আজ একাদশী, আমার শরীর অবসন্ন লইয়া পড়িতেছে, সাবধান, কেহ আমার মুখে গঙ্গাজলটুকুও দিও না।” এই কথা বলার কিছুক্ষণ পরে মালা জপ করিতে করিতে, দেখিতে দেখিতে নিদ্রা গ্রস্তের ন্যায় ঢলিয়া পড়িলেন; তখন দেখা গেল যে গুপ্ত সাধকের প্রাণ বায়ু বহির্গত হইয়া গিয়াছে! গৌরী শঙ্কর ভট্টাচাৰ্য্য গৌরী শঙ্কর ইটার পঞ্চগ্রামে কৃষ্ণাত্রেয় গোত্রীয় ব্রাহ্মণ কুলে ১৭৯৯ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। ইহার পিতার নাম জগন্নাথ ভট্টাচাৰ্য্য। জগন্নাথের দুই পুত্র শ্রীনাথ ও গৌরী শঙ্গর। গৌরী শঙ্কর গৌর বর্ণ ও খৰ্ব্বাকৃতি পুরুষ ছিলেন। গ্রামের চতুষ্পাঠীতেই গৌরীশঙ্গরের ব্যাকরণ ও সাহিত্য শিক্ষা সমাপ্ত হয়। তৎপূৰ্ব্বেই তাহার মাতৃ বিয়োগ হইয়াছিল। তিনি যখন কিশোর বয়স্ক পিতা জগন্নাথ তখন পরলোক গমন করেন। পিতৃ বিয়োগে গৌরী শঙ্কর অত্যন্ত বিস্বাদিত হন এবং একদা রাত্রিযোগে কাহাকেও কিছু না বলিয়া বাটী পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক নবদ্বীপ গমন করেন। তখন গৌরী শঙ্করের বয়স পঞ্চদশ হয় মাত্র, পঞ্চদশ বর্ষীয় বালক অপরিচিত নবদ্বীপে জনৈক অধ্যাপকের গৃহে উপস্থিত হইয়া ন্যায়াধ্যয়নের অভিপ্রায় জ্ঞাপন করেন। তৎকালে দেশে বিদ্যা আর অর্থের অভাব ছিল না, অধ্যাপকবর্গ ছাত্রের আহার দিতেন, দেশের জমিদারবর্গ হইতে তাহার সাহায্য পাইতেন। গৌরী শঙ্কর নিরুদ্বেগে নবদ্বীপে ন্যায় অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন ও অসাধারণ প্রতিভা বলে অল্প কাল মধ্যেই সুখ্যাতি অর্জন করিতে সমর্থ হইলেন, তাহার যশঃপ্রভা কলিকাতা প্রভৃতি অঞ্চলেও বিকীর্ণ হইয়া পড়িল । গৌরী শঙ্কর যথাকালে অধ্যাপক হইতে “তর্কবাগীশ” উপাধি লাভ করেন এবং কতিপয় মহানুভব ব্যক্তির পরামর্শে কলকাতায় আগমন করেন। কলিকাতায় অল্পকাল মাত্র অবস্থিতির পরেই তিনি শোভাবাজারের রাজা কমল কৃষ্ণ রাম বাহাদুরের সহিত পরিচিত হন, গুণগ্রাহী কমলকৃষ্ণ তাহাকে সভাপণ্ডিত নিযুক্ত করিয়া মাসিক ২০ টাকা বৃত্তি, ও শোভাবাজারের বালাখানায় বাসের জন্য একটি বাটিকা নিৰ্দ্ধারিত করিয়া দেন। প্রখ্যাত কীৰ্ত্তি সম্পন্ন রাজা রামমোহন রায় যখন সতীদাহ নিবারণের জন্য চেষ্টান্বিত হন, তখন গৌরী শঙ্কর তাহার প্রধান সাহায্যকারী ছিলেন; ইহার হিন্দু শাস্ত্রানুমোদিত তর্কে সতীদাহের বিরুদ্ধ পক্ষকে অনেক সময় নিরুত্তর থাকতে হইত। তিনি সতীদাহ সম্বন্ধে রাজার সহিত এক মতাবলম্বী হইলেও প্রচলিত হিন্দু ধৰ্ম্মের বিরুদ্ধে রাজারাম মোহন রায়ের সহিত অচিরেই তাহার বিচ্ছেদ ঘটে । তাহার কৰ্ম্ম-ক্ষেত্র অতঃপর আরও প্রসরতর হইয়া পড়িল, স্বগীয় ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত পরিচালিত সংবাদ প্রভাকরের অনুকরণে ১৮৩৯ খৃষ্টাব্দে শোভাবাজারের রাজার আনুকূল্যে “সম্বাদ ভাস্কর" পত্র প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকা প্রথমতঃ দৈনিক ছিল। এই কাগজের শীর্ষে দুইটি সংস্কৃত শ্লোক থাকিত, তাহাতে ভাস্কর সম্পাদকের নাম ও তিনি যে পূৰ্ব্বদেশ বাসী, তাহার উল্লেখ ছিল। ভাস্কর ব্যতীত গৌরী শঙ্কর “রসরাজ" নামে একখানা পত্রিকা প্রকাশ করেন, রসরাজ ব্যঙ্গ বিদ্রুপের অফুরন্ত উৎস স্বরূপ ছিল, কিন্তু উহা জন্ম মাত্রই বিপন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। ইহাতে কাশীম বাজারের রাজা কৃষ্ণনাথের কুৎসা প্রকাশিত হওয়ায় তৎবিরুদ্ধে রাজা মানহানির মোকদ্দমা উপস্থিত করেন, ইহাতে গৌরী শঙ্করের বিনাশ্রমে ছয় মাস কারাবাসের ও পাঁচ শত