পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৪৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ দিলেন। উপরের মাটি সরান হইলে গৰ্ত্ত হইতে যেন একটা রশ্মি-রেখা চলিয়া গেল বলিয়া দৃষ্ট হইল, সাধুর কোনরূপ অমঙ্গল সংঘটিত হইয়াছে মনে করিয়া চৌধুরী আতঙ্কিত হইলেন এবং তৎক্ষণাৎ অগ্রসর হইয়া দেখিলেন যে সাধু পূৰ্ব্ববৎ বসিয়া রহিয়াছেন। বহিবায়ু দেহে লাগিয়া অচিরাৎ সাধুর চেতনা হইল এবং তিনি অনতিবিলম্বেই গৰ্ত্ত যে গঞ্জিকা, রুটি ও দুগ্ধ রক্ষিত হইয়াছিল, তাহা পূৰ্ব্ববৎ রহিয়াছে দৃষ্ট হইল—সাধু স্পর্শ করেন নাই। পঞ্জাবের প্রসিদ্ধ হরিদাস ভূগর্ভে প্রবেশের পূৰ্ব্বে কয়েকটি প্রক্রিয়া করিতেন; সুদূর গ্রাম্য অঞ্চলে সাধু শীতলগিরি তদ্রুপ কোন প্রক্রিয়া করিয়াছিলেন কি না; কেহ তাহার সংবাদ রাখে নাই, সুতরাং বলিতে পারা যায় না। এই ঘটনার কথা প্রচারিত হইলে বহুলোকের সভক্তি দৃষ্টি শীতলগিরির উপর পতিত হয় এবং বহুলোক কর্তৃক তিনি নানাভাবে সম্মানিত হন। সাধু সমাধি হইতে না উঠা পর্যন্ত ঘটনাটি সংগোপনে রাখা হইয়াছিল। এই সমাধি ব্যাপারের পর সাধু প্রায় ২৫ বৎসর কাল জীবিত ছিলেন। শৈলজা দেবী শৈলজা দেবী একজন সতী । সতরশতী পরগণার সাধুহাটী গ্রামের প্রসিদ্ধ ভট্টাচাৰ্য্য বংশে গঙ্গারাম শিরোমনি১৪৭ ও বিষ্ণুদাস ভট্টাচাৰ্য নামে দুই সহোদর ছিলেন, তন্মধ্যে বিষ্ণুদাসের পত্নীর নাম শৈলজা। শৈলজাসুন্দরীর পতিভক্তি অতুলনীয় ছিল, তিনি প্রত্যহ পতি-পাদোদক পান না করিয়া অন্ন গ্রহণ করিতেন না; ছায়ার ন্যায় সদা পতির অনুগতি করিতেন। তাহার মুখে সর্বদাই হাসি দেখা যাইত, তিনি অতি মিষ্টভাষিণী ও প্রিয়ংবদা ছিলেন। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা অন্যরূপ, সতীর স্মিতপ্রফুল্ল বদনে বিষাদের কালিমা-রেখা পতিত হইল, হাসির স্থলে অশ্রুরাশি দেখা দিল, বিষ্ণুদাস কঠিন পীড়াগ্রস্ত হইলেন। পীড়িত সকলেই হয়, কিন্তু বিষ্ণুদাস পীড়িত হওয়া মাত্রই পতিপ্রাণা শৈলজার প্রাণে কি এক আশঙ্কার উদয় হইল, আর তাহা দূর হইল না। সতীর আশঙ্কা দেখিতে দেখিতে সত্যে পরিণত হইল, বিষ্ণুদাস ব্যাধি হইতে উঠিলেন না-মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন। পতির মৃত্যুর পর শৈলজার আর এক ভাব দেখা গেল, পূৰ্ব্বে যিনি বাত্যা-বিতাড়িতা ব্রততীর মত ব্যাকুলিতা ছিলেন, এক্ষণে তিনি স্থির ধীর প্রশান্ত, গৈরিক স্রাবের পূৰ্ব্বে বহ্নি-গর্ভ গিরি যেরূপ শান্তভাবাপন্ন বোধ হয়, তদ্রুপ। এই ভাব দৃষ্টে সমাগত স্বজনগণ সহজেই বুঝিতে পারিলেন যে, সতী পতির সহগামিনী হইবেন। তখন ভব্য ব্যক্তিবর্গ প্রবোধ দিয়া, তাহাকে নিরস্ত করিতে চাহিলেন; কিন্তু কিছুতেই সে দৃঢ় সঙ্কল্পের অন্যথা হইল না। যখন বিষ্ণুদাসের চিতা জ্বলিয়া উঠিল, তখন সতী সহাস্যননে পতির পাদদেশে বসিয়া পান খাইতে খাইতে পরমার্থ তত্ত্বের উপদেশ দিয়া উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে আশ্বস্ত করিলেন। বিস্ময়বিহবল-চিত্তে সমাগত সকলে দেখিতে লাগিল যে, সতীর কটিদেশ পর্যন্ত দগ্ধ হইয়া গিয়াছে, কিন্তু মুখে একটুও বিকার নাই, তিনি তখনও কথা কহিতেছেন। তাহার উপর উদর দগ্ধ হইয়া গেলে, আর বসিয়া থাকিতে পারিলেন না-পতি পদে ঢলিয়া পড়িলেন। সতীর পবিত্র আত্মা নশ্বরদেহ পরিত্যাগ করিয়া পতির সহিত উদ্ধলোকে চলিয়া গেল । যে স্থানে সতী "সহমরণ" গমন করেন, সে স্থান “সতীকুণ্ড" রূপে খ্যাত হইয়াছে; বরাক নদীর যে স্থান হইতে “খিরাউন” খালা গিয়াছে, এই “সতীকুণ্ড” সেই স্থানেই দেখিতে পাওয়া যায়। ১৪৭ সাধুহাটীর গঙ্গারাম শিরোমণি একজন সনদ প্রাপক সম্মানিত ব্যক্তি। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৩ য় ভাঃ অঃ শেষ টীকা দেখ।