পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২১৫ বাবুর বিশেষ সাহায্যকারী। ইহাদের উভয়ের যত্নে এই সৰ্ব্বাঙ্গ সুন্দর বইটি লোকলোচনের সম্মুখবর্তী হইয়াছে। ইহারা উভয়েই আমাদের ধন্যবাদের পাত্র। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তকে আদর্শ বলিয়া বাঙ্গালার প্রত্যেক জেলার ইতিহাস রচনা করা এক্ষণ আমাদের কৰ্ত্তব্য হইয়াছে। ৩—সাপ্তাহিক সংবাদপত্র বসুমতী—৩রা কাৰ্ত্তিক, ১৩১৯ সাল। (লেখক শ্রীযুক্ত সুরেশচন্দ্র সমাজপতি ।) শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত –পূৰ্ব্বাংশ ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক। শ্রীযুক্ত অচ্যুতচরণ চৌধুরী প্রণীত, মূল্য চারি টাকা। আজ কাল আমাদের দেশে ইতিহাসের যথেষ্ট অনুসন্ধান ও আলোচনা হইতেছে, ইহা যে আধুনিক,—বাঙ্গালার আলোচনাযোগ্য ইতিহাস নাই, তাহারা যে নিতান্ত ভ্রম প্ৰবৰ্ত্ত, বৰ্ত্তমান যুগের অনুসন্ধান তাহা দিন দিন দৃঢ়তার সহিত সপ্রমাণ করিয়া দিতেছে। বাঙ্গালা দেশ যতই আধুনিক হউক না কেন,—আমরা এখন যে সকল দেশের ইতিহাস আলোচনা করিয়া থাকি, সেই সকল দেশ অপেক্ষা বঙ্গদেশ প্রাচীনতর। আর্য্যগণ বহু সহস্ৰ বৎসর পূৰ্ব্বেই বঙ্গে আসিয়াছেন। বঙ্গের উত্তরপূৰ্ব্ব প্রান্তে শ্রীহট্ট অঞ্চল। শ্রীহট্ট বঙ্গেরই অঙ্গীভূত। বৃটিশ রাজ শাসন সৌকাৰ্য্যার্থে শ্রীহট্টকে যে ভাগেই স্থাপিত করুন না কেন, আমরা চিরকালই শ্রীহট্টকে আপনার বলিয়া আসিতেছি, আপনার বলিয়াই মনে করিব। জ্ঞাতি স্থানান্তরিত হইলেই হিন্দুর কখনই তাহার সহিত জ্ঞাতিত্ব অস্বীকার করে না। দুরস্থ জ্ঞাতির অশৌচপালনে হিন্দু কখনও পরাজমুখ নহে। সুতরাং শ্রীহট্ট আসামভূক্তই হউন, আর তিব্বতভুক্তই হউন—শ্ৰীহট্ট আমাদের, শ্রীহট্ট বাঙ্গালারই । এই শ্রীহট্টের অতীত ইতিহাস বাঙ্গালারই গৌরবের পরিচায়ক । যখন বাঙ্গালার অনেক আধুনিক সমৃদ্ধ অঞ্চল, বিস্তীর্ণ সলিল রাশিতে নিমজ্জিত ছিল,—তখনও শ্রীহট্ট বক্ষ বিস্তীর্ণ করিয়া আমাদেরই সে পূৰ্ব্বগত আৰ্য্যগণকে আশ্রয় দিয়াছে। আমাদেরই কত ধৰ্ম্ম প্রাণ পূৰ্ব্বপুরুষ তীর্থযাত্রা উপলক্ষে শ্রীহট্টে যাইয়া আপনাদিগকে কৃতাৰ্থ মনে করিয়াছেন। প্রায় চারি সহস্র বর্ষ ধরিয়া, এই অঞ্চলে আর্য্যকীৰ্ত্তির বিজয় বৈজয়ন্তী উড়িয়াছিল। সে কীৰ্ত্তিকথা অধ্যয়ন করিবার জন্য যাহার চিত্ত ব্যাকুল না হয়,—তিনি হিন্দু নাম গ্রহণের যোগ্য নহেন । এতদিন শ্রীহট্টের ইতিহাস সহজপ্রাপ্য ছিল না, এখন উহা সহজ প্রাপ্য হইয়াছে। আলোচ্য গ্রন্থখানিতে এত বিস্ময়কর ব্যাপার এরূপ সুন্দর ভাবে নিপুণতা সহকারে প্রদত্ত হইয়াছে যে ইহা পাঠ করিলে বিস্মিত হইতে হয়। গ্রন্থকার মহাশয় এই গ্রন্থে এত সুন্দর ও প্রাচীন তথ্য সংগ্ৰহ করিয়াছেন যে, ইহা পাঠ করিয়া তাহাকে ভূয়সী প্রশংসা না করিয়া থাকা যায় না। গ্রন্থকার মহাভারতের সময় হইতে বৰ্ত্তমান পর্য্যন্ত প্রায় পঞ্চসহস্র বৎসরের ইতিহাস অতি সুন্দরভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। গ্রন্থের ভাষা এত সুললিত, যুক্তি এত সুবিন্যস্ত যে, উহা পাঠ করিতে আরম্ভ করিলে শেষ না করিয়া থাকা যায় না। প্রতি ছত্ৰে ছত্রে পত্রে পত্রে পাঠকের কৌতুহল বৃদ্ধি পায়। সংবাদ পত্রের সংক্ষিপ্ত স্থানে এইরূপ ইতিহাসের তথ্য পরিচয় দেওয়া সম্ভব নহে। এইজন্য আমরা পাঠকবর্গকে এই সুন্দর গ্রন্থখানি পাঠ করিতে অনুরোধ করিয়াই ক্ষান্ত হইলাম। গ্রন্থখানি বৃহৎ। ছাপা, কাগজ, ও বাধাই অতি সুন্দর। ইহাতে অনেকগুলি সুন্দর সুন্দর ছবি আছে। গ্রন্থখানির আদর অবশ্যম্ভাবী।"ঃ