পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ যদি ভারতের গৌরব মুকুট হয়, তবে আপনাদের পূর্ব্বপুরুষেরা সেই মুকুটের গৌরবোজ্জ্বল মণি ছিলেন । আপনাদের পিতৃভূমি, প্রেমের অবতার শ্রীচৈতন্যের জন্মভূমি, আপনাদের দেশ বাংলার স্বাধীন হিন্দু সাম্রাজ্যের স্থাপনকর্ত্তা রাজাগণের কূটরাজনীতিজ্ঞ মন্ত্রী নরসিংহের দেশ, আপনাদের এই জলবায়ুতে এমন পণ্ডিত জন্মিয়াছিলেন, যাঁহার গৌরবগাঁথা কীর্ত্তন করিতে কবি গাহিয়াছেনঃ- পক্ষধরের পক্ষ পাতন করি । বাঙ্গালীর ছেলে ফিরে এল দেশে যশের মুকুট পরি॥” জানিবেন, যিনি মেঘনানদীর পূর্ব্বাঞ্জলে মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তিপাত করিয়াছিলেন, সেই বীরের পদভরে এই শহর একদিন কম্পিত হইত, আজ তাঁহারই পুত্রপৌত্রগণ দুর্গতির জীবন যাপন করিতেছেন। জ্ঞান, প্রেম, ভক্তি, কাব্য, ন্যায় ও ললিত কলার পরিচর্য্যায়, ধর্ম্মক্ষেত্রে ও সমরক্ষেত্রে এক দিক এই অধুনাপতিত শ্রীহট্টের কৃতিসন্তান পূর্ব্বভারতের আর্য্যজাতির বিজয় গৌরব প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। শ্রীহট্টবাসি! আপনারা বিস্মৃতির জলে আপনাদের পূর্ব্বপুরুষদের গৌরবকীর্তি ভাসাইয়া দিয়া নিজেদের অকর্ম্মন্য বলিয়া জগতের সমক্ষে ঘৃণিতের জীবনযাপন করিতেছিলেন, আজ এই ইতিহাস পাঠ করুন, জানিতে পারিবেন, ভারতবর্ষে আর্য্যগৌরব প্রতিষ্ঠাকল্পে যে মস্তিষ্ক ও শোণিতপাত হইয়াছিল, তাহার ক্ষীণ কণিকা এখনও ঐ তুচ্ছ দেহের ভিতরে বিষাদের গান গাহিয়া প্রবাহিত হইতেছে। আর বিশেষ বলিতে চাহিনা, যদি অতীতের উপসনায় কখনও আপনি গৌরব অনুভব করেন, তবে একখণ্ড ইতিবৃত্ত পাঠ করিয়া তাহার স্বার্থকতা অনুভব করুন। পুস্তকে প্রকাশিত সকল কথাই যে সম্পূর্ণ সত্য হইবে, এমন কথা আমরা বলি না; তবে পুস্তকে যদি স্থানে স্থানে সামান্য ভুল হয় তবে এই ত্রুটী গ্রন্থকারের নহে, কারণ গ্রন্থকার সকলের নিকট হইতে তথ্য সংগ্রহ করিয়া "তিবৃত্ত রচনা করিয়াছেন, এ স্থলে দেশের লোকদের কর্তব্য যে তাহা প্রদর্শন করিয়া দিয়া ইতিবৃত্তখানি নির্ভুল করেন। তবে গ্রন্থকার জ্ঞাতসারে যে ভুল ভ্রান্তির প্রশ্রয় দেন নাই, ইহাই তাঁহার বৈষ্ণবোচিত সরলতার পরিচয়। পুস্তকপাঠে দেখিবেন যে তিনি স্থানে স্থানে বিভিন্ন পরস্পর-বিরোধী মত সকলের উল্লেখ করিয়াছেন। ইহাতে ঐতিহাসিকের সত্যানুসন্ধান স্পৃহার জয় হইয়াছে। অচ্যুতবাবুর ইতিহাস শ্রীহট্টের প্রথম প্রথম ইতিহাস, যাঁহারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রথম ইতিহাস দেখিয়াছেন তাঁহারাই বলিবেন যে এটা একটা দেশের প্রাণ ইতিহাস এই গ্রন্থ অপেক্ষা অধিকতর নির্ভুল বা সৌষ্টবসম্পন্ন হইতে পারে না। এমন নির্ভুল ইতিহাস লিখিলে লেখককে দেবতা বলিতে হইত, তবে বৈষ্ণব গ্রন্থকার কখন নিজকে দেবতা মনে করেন না, তিনি সত্যানুসন্ধান-স্পৃহাসম্পন্ন সাধারণ মানুষ, — মানুষ যাহা এই ক্ষেত্রে করিতে পারে, তাহা তিনি করিয়াছেন, পুস্তক সম্বন্ধে এতাধিক প্রশংসা করিবার শক্তি নাই।” -

এতদ্ব্যতীত “হিতবাদী” (৪ঠা ফাল্গুণ ১৩১৮), বিশ্ববার্তা (১৯১১ ইং) প্রভৃতি সংবাদ পত্রে ইতিবৃত্তের যে সমালোচনা প্রকাশিত হইয়াছে; বাহুল্য বিধায় তাহা উদ্ধৃত হইল না । এস্থলে উদ্ধৃত অংশে সমালোচনা প্রবন্ধগুলি হইতে কোন কোন স্থান পরিত্যাগ করিয়া সংক্ষেপ করতঃ প্রকাশ করা গেল। প্রায়শঃ দৃষ্ট হয় যে, ব্যবসাদারী চালে, সমালোচনা হইতে প্রতিকূল অংশ বৰ্জ্জনপূর্ব্বক প্রশংসাবাদ মাত্রই উদ্ধৃত করা হইয়া থাকে। উপরোক্ত প্রবন্ধগুলি হইতে যাহা বাদ দেওয়া গেল, তাহা তদ্রূপ অংশ নহে। ইতিবৃত্তের বিষয়-পরিচয় সম্বন্ধে যাহা প্রবন্ধে ছিল, সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে তাহাই মাত্র বাদ দেওয়া অংশে পরিত্যক্ত হইয়াছে।