পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ অধ্যায় : বুরুঙ্গা, রেঙ্গা ও ঢাকাদক্ষিণের ব্রাহ্মণ বংশ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৭৯ গ্রন্থকার রতিকান্ত করিয়াছিলেন। মীমাংসা শাস্ত্রে তাহার বিশেষ অধিকার ছিল, উপাধি প্রাপ্ত গৃহে উপস্থিত হইলে তিনি “চতুর্দশ পরগণার রাজপণ্ডিত” ও “কৌশলের পণ্ডিতি" লাভ করেন ৭ হিন্দুর দায়ভাগ সংক্রান্ত মোকদ্দমা উপস্থিত হইলে আদালতে তাহারই ব্যবস্থা প্রামাণ্য গণ্য হইত। তিনি কল্যাপব্যাকরণের অমূল্যটীকা "সিদ্ধন্তচন্দ্র" নামক এক সংস্কৃত গ্রন্থ প্রণয়ণ করেন, উহা এতদেশীয় টােলে অধীত হইত। ইহার মৃত্যু এক আশ্চর্য ব্যাপার, একদা তিনি সুস্থদেহ ইষ্টমন্ত্র জপ করিতেছেন, তদবস্থায় তদীয় ব্ৰহ্মরন্দ্র ভেদিত হইয়া প্রাণবায়ু বহির্গত হইয়া যায়। সদর আমীন রাম রাম প্রসিদ্ধ রাম রাম পণ্ডিত ইহার পুত্র; পিতৃবিয়োগের পর তিনি “কৌশলের পণ্ডিত” প্রাপ্ত হন এবং তৎপর “সদর আমীন” নিযুক্ত হন। এই পদ বৰ্ত্তমান সবজজের তুল্য। অশীতি বৎসর পর্যন্ত রাজকাৰ্য করিয়া তিনি পেন্সন গ্রহণ পূৰ্ব্বক কাশীতে গমন করিয়া ছিলেন এবং তৎপরে মুর্শিদাবাদে আগমন করেন। তথায় তাহার আসন্নকাল উপস্থিত হয়; তিনি মৃত্যুর পূৰ্ব্বক্ষণে গঙ্গাতে নাভিজলে উপবেশন পূৰ্ব্বক জপমালা হাতে লইয়া জপ করিতে করিতে সজ্ঞানে তনুত্যাগ করেন। রামরামের সৌভাগ্য ও সম্মান তাহার জ্যেষ্ঠতাত রূপেশ্বরের কৃপায় হইয়াছিল। রূপেশ্বর যোগসিদ্ধ মহাত্মা ছিলেন, রামরাম সৰ্ব্বদা তাহার সেবা করিতেন। মৃত্যুকালে রূপেশ্বর তাহাকে এই বর দিয়াছিলেন যে, তিনি সামান্য চেষ্টা মাত্রে অগাধ বিদ্যাৰ্জ্জনে সমর্থ হইবেন, তিনি ধনে মানে দেশ পূজ্য হইবেন। এই বর দানান্তে রূপেশ্বর সমাধি অবলম্বনে দেহত্যাগ করিয়াছিলেন। রূপেশ্বরের প্রপৌত্র রামঙ্কির বিদ্যারত্ন। ইনি দর্শন শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করতঃ "বিদ্যারত্ন” উপাধি প্রাপ্ত হন ও চন্দ্রনাথ তীর্থে গমন করিয়া যোগসাধনে প্রবৃত্ত হন। এ সংবাদ প্রাপ্তে পিতা ৩থায় গিয়া পুত্রকে বাড়ীতে আনয়ন করেন। পরে কাশীবাস জন্য সপরিবারে কাশীতে গমন করিয়াছিলেন । _ একদা কাশীধামে বুন্দিরাজ্যের অধীশ্বর রাজসিংহ আগমন পূৰ্ব্বক হিন্দুস্থানী পণ্ডিতবর্গকে বহুধন বিতরণ করেন। বাঙ্গালীর মধ্যে কাশীতে ভাল পণ্ডিত নাই, এই এক ভ্রান্ত ধারণা কেহ রাজাকে বুঝাইয়া দিয়াছিল। বাঙ্গালীর মধ্যে কাশীতে তখন রামকিঙ্করই শ্রেষ্ঠ, কাশী প্রবাসী বঙ্গীয় পণ্ডিতমন্ডলী প্রনষ্ট গৌরব উদ্ধারের জন্য ইহাকেই ধরিলেন। বিদ্যারত্ব একটা শ্লোক রচনা করিয়া রাজসদনে প্রেরণ করলেন। পণ্ডিত-পালক রাজসিংহ ৭ “কৌশলে"-কেন্সিলেব? কাছাড়ের দণ্ডবিধিব প্রতি প্রকরণের ভূমিকায় এই শদেব ভূরি প্রয়োগ সৃষ্ট হয। জয়ন্তীয়া প্রথম বন্দবত্তের কাগজপত্রেও এই শদেব ব্যবহার আছে। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ৪র্থ খণ্ডের স্থানে স্থানে ইহাব উল্লেখ আছে । ৮ এই টীকাব প্রারম্ভেই তিনি লিখিয়াছেনঃ "দুৰ্গেতি কঠিন্যতমঃ প্রভাবাৎ সিদ্ধান্তরাত্রেী নহি নিৰ্গমঃস্যাৎ, সিদ্ধান্তচন্দ্রং তদিহপ্রযুঙক্তে সিদ্ধান্তবায়ী রতিকান্তশৰ্ম্মা।"