পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৩ চতুর্থ অধ্যায় : বডলিখাব পুরকায়স্থ কথা এবং প্রতাপগডের বিবরণ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত তাহার পর ইন্দুর ও বৃহৎ ভেক ইত্যাদির বিচিত্র “সিধা” পাইলে, মোহরের রজনের উপলক্ষে পলাইয়া আসিয়াছিল। ইহা হইতে উলঙ্গ লুশাইদের বিচিত্র ব্যবহারের বর্ণনা শুনিয়া ও সিধার সংবাদ পাইয়া পরবর্ষে কেহই উপহার লইয়া যাইতে স্বীকৃত হয় নাই। এইরূপে উপহার দেওয়া বন্ধ হইলে, কুকিগণ ক্ষেপিয়া তৎপ্রতিশোধ মানসে ১২৩৩ সালে প্রতাপগড়ের কয়েকটি কাঠুরিয়াকে পৰ্ব্বত মধ্যে নিহত করে। ইহাই কুকিদের শ্রীহট্ট জিলায় সৰ্ব্বপ্রথম উৎপাতের সংবাদ।-- ইহার পর হইতেই কুকিরা লোকের উপর উৎপাত করিতে আরম্ভ করে; যত বারই তাহারা প্রতাপগড় দিয়া আক্রমণের চেষ্টা করিয়াছে এবং গবর্ণমেন্ট তৎ প্রতিকারার্থ যত্ন করিয়াছেন, ততবারই এই চৌধুরী বংশীয়গণ রসদাদি যুগাইয়া গবর্ণমেন্টের সহায়তা করিয়াছেন। (সে সকল আক্রমণ সংবাদ পূৰ্ব্বাংশে বলা গিয়াছে।) ব্যক্তিগত বিবরণ পূৰ্ব্বোক্ত কেশবরামের পুত্র হুলাসরাম অতিশয় শ্রীমান পুরুষ ছিলেন, দক্ষিণ পৰ্ব্বতে ত্রিপুরাধিপতির জনৈক কুটুম্ব-কৰ্ম্মচারীর সহিত তাহার দেখা হয়, তিনি ইহাকে অবিবাহিতা জনৈকা রাজকন্যার যোগ্য বব মনোনীত করিয়া রাজধানীতে লইয়া যান। কৃতদার হুলাসরাম বিবাহে অসম্মত হইলে তাহাকে তথায় বহুদিন আবদ্ধ করিয়া রাখা হয; পরে যখন দুর্গোৎসবের আনন্দ কোলাহলে রাজধানী মুখরিত হইযা উঠে, যখন তিনি মুক্তি কামনায় ও স্বগৃহে দেবীপূজার কথা স্মরণে ক্ৰন্দন করিতে থাকেন, দেবী-কৃপায় তখন তিনি মুক্ত হন; তিনি ও র্তাহার ভ্রাতা আকুতরাম অতি বদান্য ছিলেন। পাণিশালীর আখড়াবাসী কোন বৈষ্ণব ভক্তি শাস্ত্রে বিশেষ বুৎপত্তি লাভ করেন, ইহার গুণের পুরস্কার স্বরূপ তিনি তাহাতে চাবিসহস্র টাকা মূল্যের ভূসম্পত্তি দান করেন ও র্তাহার শিষ্যত্ব স্বীকার করেন। প্রতাপগড়ের ফরিদকোণা নিবাসী মুরাদ মোহাম্মদ নামক ব্যক্তি এ অঞ্চলে সৰ্ব্বপ্রথম হজব্রত উদযাপন করিযা আসিলে, লোকের ধৰ্ম্মোৎসাহ বৰ্দ্ধনার্থ তাহাকে প্রায় এক হাল পরিমিত ভূমি দান কবিযাছিলেন। এই সকল ভূমি ব্যতীত এই ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রদত্ত ব্ৰহ্মত্র এবং সন্নিকটবৰ্ত্তী কানাইলাল দেবতার দেবত্র অদ্যাপি তাহাকে দাতৃত্বের প্রমাণ দিতেছে। আকুতরাম বহু অর্থ ব্যয়ে ও ক্লেশে নীেকোযোগে একবার বৃন্দাবন দর্শন করিয়া আসেন; গমনাগমনে র্তাহার আট মাস কাল লাগিয়াছিল। মায়ারাম ও মাণিক্যরাম ভ্রাতৃদ্বয় অতি প্রতাপান্বিত ছিলেন, ইহাদের শাসন ভয়ে দেশে কেহই কোন অন্যায় কাৰ্য্য করিতে পারিত না। দেশে চোরে উপদ্রবের নামও ছিল না; রাত্রে ঘবে দোয়ার খোলা রাখিয়া নিরুদ্বেগে সকলে নিদ্রা যাইবে, এই কথা তাহারা প্রচার ও তাহা কার্য্যে পবিণত কবেন। তাহারাও প্রায় সহস্র মুদ্রা মূল্যের ব্রহ্মত্র দান করিযাছিলেন। মাণিক্যরাম ঢাল, তলওয়াব ও বল্লম লইয়া বাড়ী হইতে প্রতাপগড়ের কাছারীতে যাইতেন, বীরবেশে সজ্জিত থাকিতে ভালবাসিতেন। ১৭ সবকাৰী ইতিহাসে এই কাঠবিয হত্যাব সংবাদটি মাত্র আছে, কিন্ত,কি কাবণ বশতঃ কুকিবা ক্ষেপিয়াছিল, জমিদাবদেব উপহাব প্রেবণ কেন বন্ধ হইযাছিল, ইত্যাদি বিববণ তাহাতে নাই। এই কাঠুরিযা হত্যাব অনুসন্ধান জন্য গবর্ণমেন্ট লোক পাঠাইলে, কুকিযা ধবিয়া বাখে, গবর্ণমেন্ট টাকা দিযা সেই লোক মুক্ত কবেন। শ্রীহট্টেব ইতিবৃত্ত পূবর্বাংশেব ২য ভাগ ৫ম খণ্ড ২য় অধ্যায এই কথা উল্লেখিত হইয়াছে।